আজ থেকে দশ বছর আগে প্রথম পর্বত অভিযানে নামেন ইকরামুল হাসান শাকিল। দুর্দান্ত সাহসী এই তরুণ মাত্র ২১ বছর বয়সে এই অভিযানে নাম লেখান। তখন হয়তো মনে প্রশ্ন জাগে, কিসের টানে মৃত্যুকে তুচ্ছ করে তারা পর্বতে যান? এ ছাড়া এর কোনো ভবিষ্যৎ আছে? এমন প্রশ্নের সম্মুখীন তাদের সবচেয়ে বেশি হতে হয়। তাকেও কম শুনতে হয়নি। কিন্তু সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই তার পর্বত অভিযান শুরু হয়।
বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাব থেকে প্রথমবারের মতো সুযোগ পান ‘মাউন্ট কেয়াজো-রি অভিযানের’। নামচে বাজারের দক্ষিণে সলো খুম্বু অঞ্চলে হিমালয়ের সারিবদ্ধ পর্বতমালা চলে গেছে নেপাল-তিব্বত সীমান্তের চৌ-য়্যু পর্যন্ত। পশ্চিমে থামে ভ্যালি আর পূর্বে গোকো ভ্যালি রেখে দক্ষিণ রিজের সবচেয়ে উঁচু শীর্ষবিন্দুটিই হচ্ছে মাউন্ড কেয়াজো-রি। ৬,১৮৬ মিটার বা ২০,২৯৫ ফুট। পর্বতটি বেশ আকর্ষণীয়, খাড়া চূড়া।
পর্বতারোহীদের সামনে যেন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে দিগন্তজুড়ে সটান দাঁড়িয়ে আছে। খুব বেশি পর্বতারোহীরা তখনো সেখানে ভিড় করেননি। ফলে যারা এই পর্বত সামিটের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন; তারা পর্বতের সেই কাঙ্ক্ষিত নিস্তব্ধতা উপভোগ করার দারুণ সুযোগ পান। নিঃসঙ্গ বিশাল বিস্তৃত ভ্যালিতে অপূর্ব সুন্দর এর বেসক্যাম্প। উচ্চতা খুব বেশি না হলেও পর্বতারোহীদের টেকনিক্যাল দক্ষতা কতটা, সেটি ভালোই পরখ করে নেয় মাউন্ট কেয়াজো-রি।
নেপাল পর্যটন মন্ত্রণালয় ২০০২ সালে মাউন্ট কেয়াজো-রিকে পর্বতারোহীদের আরহণের জন্য খুলে দেয়। সে বছরই একটি ফ্রাঙ্কো-বৃটিশ টিম প্রথম মাউন্ট কেয়াজো-রি সামিট করে। তারা মাচ্ছেরমো হয়ে এগিয়ে গিয়ে কেয়াজো গ্লেসিয়ার ট্রাভার্স করে দক্ষিণ-পশ্চিম রিজ ধরে সামিট করে। এরপর ফ্রান্স, আমেরিকা, ডাচ, অস্ট্রেলিয়া নানা দেশের পর্বতারোহীরা মাউন্ট কেয়াজো-রি সামিট করেন।
বাংলাদেশ থেকে দ্বিতীয়বারের প্রচেষ্টায় প্রথম সামিট সম্পন্ন হয় ২০১৫ সালে। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে সেদিন তারা সফল হয়েছিলেন। ৭ নভেম্বর নেপালি সময় সকাল ১১.২৯ মিনিটে কাজী বাহলুল মজনু বিপ্লব প্রথম ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের বিজয়ী পদচিহ্ন ফেলেন। তারপর একে একে এম এ মুহিত ও ইকরামুল হাসান শাকিল উঠে আসেন পাহাড় চূড়ায়। দুই শেরপাসহ তারা তিনজন দাঁড়িয়ে ছিলেন কেয়াজো-রির শিখরে।
জীবনের প্রথম কোনো পর্বতের চূড়ায় পা রাখার আনন্দে সুখী হয়েছিলেন শাকিল। মনের অজান্তেই চোখের কোণে পানি স্বপ্নজয়ের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। বাকশূন্য হয়ে শুধু চারপাশ দেখছিলেন। সব কষ্ট মুহূর্তেই ভুলে গেলেন। আর মনে মনে আশা প্রকাশ করছিলেন একদিন মাউন্ট এভারেস্ট জয় করবেন। তার সেই স্বপ্নপূরণ হলো গত ১৯ মে। ঠিক দশ বছর পরে। শাকিলের জয়ে আনন্দিত হলো বাংলাদেশ।
এসইউ/জিকেএস