রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছে ঢাকার বিভিন্ন স্থানের ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকরা। ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) বাস্তবায়নে অনিয়মের অভিযোগ তুলে তারা ড্যাপ ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন।
ঢাকা সিটি ল্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে মঙ্গলবার (২০ মে) এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
সকাল ১০টার দিকে রাজউকের প্রধান কার্যালয়ের মূল ফটকের সামনের সড়কে অবস্থান নেন তারা। রাজউকের স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির প্রতিবাদে এবং ড্যাপ ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা সংশোধনের দাবিতে নানা স্লোগান দেওয়া হয় এ সময়। কর্মসূচিতে ক্ষুব্ধ ভূমি মালিকদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন প্রকৌশলী, স্থপতি ও আবাসন খাত সংশ্লিষ্টরাও। দাবি মানা না হলে আমরণ অনশনসহ কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
সাইদুর রহমান নামে আন্দোলনকারীদের একজন বলেন, চূড়ান্ত ড্যাপে ঢাকা শহরের ভবনের উচ্চতা কমিয়ে দিয়েছে। এটা করা হয়েছে সিন্ডিকেট করে। আমরা ওই ড্যাপ মানি না। আমার বাড়ির পাশে ১০ তলা, আমাদের দেওয়া হবে দুই তলার পারমিশন। এটা হতে পারে না।
কর্মসূচিতে আসা আরেকজন বলেন, রাজউক একই এলাকায় ভবন নির্মাণে বৈষম্য করছে এবং এটি দুর্নীতির আখড়া। তারা ভূমির মালিকদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই নতুন আইন প্রণয়নের সমালোচনা করেন। ২০২২ সালের ড্যাপ বাতিল করে ২০০৮ সালের ড্যাপ বাস্তবায়ন করা হোক। আগের ড্যাপের সঙ্গে নতুন ড্যাপে কিছু বৈষম্য আছে। বিশেষ করে শহরের অপরিকল্পিত এলাকায় একটা চরম বৈষম্য আছে, আমরা চাই এ বৈষম্য দূর করা হোক।
রাজউকের একজন কর্মকর্তা বলেন, মঙ্গলবার (২০ মে) ড্যাপ বিধিমালা নিয়ে রাজউকে একটি বৈঠক হয়েছে। মূলত এ কারণেই লোকজনকে জড়ো করা হয়েছে। সকাল থেকে কিছু মানুষ আমাদের প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হয়ে নানা স্লোগান দিয়েছেন। তাদের মূল দাবি আসলে ড্যাপ বাতিল। এর পেছনে আবাসন ব্যবসায়ীদের হাত রয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কাজী রেজাউল হোসেন বলেন, রাজউক জনস্বার্থের পরিপন্থি আইন তৈরি করছে এবং অর্থের বিনিময়ে নকশা অনুমোদন করছে। তিনি গুলশান ও বারিধারার জন্য এক আইন এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ভিন্ন আইনের তীব্র সমালোচনা করেন।
২০২২ সালের ২৪ আগস্ট নতুন ড্যাপ (২০২২-২০৩৫) কার্যকরের গেজেট প্রকাশ করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। গেজেট প্রকাশের পর থেকেই কিছু বিষয় সংশোধন করার জন্য আবাসন কোম্পানিগুলো সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিল। এরপর ২০২৪ সালের ১৬ জানুয়ারি ড্যাপ সংশোধন করে আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। সংশোধিত ড্যাপে ভূমির ব্যবহার, সরকারি-বেসরকারি আবাসন, অপরিকল্পিত এলাকা, ব্লকভিত্তিক আবাসন, একত্রীভূত প্লটে ফ্লোর এরিয়া রেশিও (ফার) সুবিধা বাড়ানো হয়। ড্যাপ সংশোধনের ফলে ভবনের প্রশস্ততা ও উচ্চতা বাড়ানোরও সুযোগও বাড়ে। এতে ভবন নির্মাণে সামনের সড়কের প্রশস্ততার ক্ষেত্রেও ছাড় দেওয়া হয়েছে।