Homeসাহিত্যমধ্যবয়সীকে বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় কিশোরীকে মারছেন মা, ভাইরাল ভিডিওটি সাজানো

মধ্যবয়সীকে বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় কিশোরীকে মারছেন মা, ভাইরাল ভিডিওটি সাজানো


বাবার বয়সী এক প্রবাসীর সঙ্গে কিশোরী মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন বাবা-মা। বিয়ের আসরে মেয়ে কবুল না বলায় মা তাকে মারধর করে। রাজধানীর ধামরাইয়ে এমন একটি ঘটনা ঘটেছে। এমন দাবিতে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটি বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে একই ক্যাপশনে ছড়ানো হচ্ছে।

ভিডিওতে বিয়ের পোশাকে পঞ্চাশোর্ধ্ব এক ব্যক্তি এবং তার পাশে কনের সাজে এক কিশোরীকে দেখা যাচ্ছে। মাথায় টুপি ও মুখে মাস্ক পরা এক ব্যক্তিকে খাতা কলম হাতে কাজীর দায়িত্বে দেখা যায়। তাঁদের ঘিরে আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ বসে আছেন। কাজী আব্দুল মান্নানকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করার জন্য বললে কনের বেশে কিশোরী বলে, ‘আমি মানি না, আমি করতাম না বিয়া।’

এরপর পাশে থাকা এক নারীকে কনে বেশে থাকা কিশোরীকে জোর জবরদস্তি করতে থাকেন। একপর্যায়ে গালে চড় দেন। এমন সময় পাশে থাকা এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, ‘মাইরেন না। একে তো মেয়েকে জোর করে বিয়ে দিতেছেন, আবার মারতেছেন!’

মো হাসিবুর রহমান শান্ত’ নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত রোববার (১৮ মে) রাত ৯টা ২১ মিনিটে পোস্ট করা ভিডিওটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। এর ক্যাপশনে লেখা, ‘ধামরাইয়ে প্রবাসী মান্নানের বিয়েতে কবুল না বলায় কন্যাকে মারধর!’ (বানান অপরিবর্তিত)

আজ মঙ্গলবার বেলা ১টা পর্যন্ত ভিডিওটি ৬ লাখ ৯০ হাজার বার দেখা হয়েছে এবং ৪ হাজার ৩০০টি রিঅ্যাকশন পড়েছে। এতে ৯১৪টি কমেন্ট পড়েছে এবং শেয়ার হয়েছে ১ হাজার ৮০০। এসব কমেন্টে অনেকে এই ভিডিওটি সাজানো বলে উল্লেখ করেছেন। আবার অনেকে সত্য মনে করেও কমেন্ট করেছেন। এমনকি মায়ের ভূমিকা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে ভিডিওটি ফেসবুকে শেয়ারও করেছেন।

Foyez Mahmud ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লেখা হয়েছে, ‘শুধু মাত্র টাকার জন্য আমাদের এসব অমানবিক কাজ করা ঠিক নয়। মেয়ের বয়স কত আর পুরুষের বয়স কত। উভয় পরিবারকে আইনের আওতায় আনা উচিৎ।’ (বানান অপরিবর্তিত)

MD Akimoddin লিখেছে, ‘কাজী সহ যারা এই বিয়েতে জড়িত আছে সবাই কে আইনের আওতায় আনা উচিত। এ বিষয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’ (বানান অপরিবর্তিত)

Giash Uddin, হাফেজ মাওঃমোশাররফ হুসাইন রহমানীআবূ মুহাম্মদ নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একই ক্যাপশনে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে।

ভিডিওটির কিছু কি–ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে Wedding Studio নামে ফেসবুক পেজে পোস্ট করা একটি ভিডিওর সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর সাদৃশ্য পাওয়া যায়। ভিডিওটি গত ১৬ মে প্রকাশিত। এর সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর ২ মিনিট ৫ সেকেন্ড থেকে হুবহু মিল পাওয়া যায়।

মধ্যবয়সী প্রবাসীর সঙ্গে বিয়েতে রাজি না হওয়ায় কিশোরী কনেকে মারধর করার দাবিতে ছড়ানো ভিডিওর সঙ্গে Wedding Studio পেজে প্রকাশিত ভিডিওর সাদৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

মধ্যবয়সী প্রবাসীর সঙ্গে বিয়েতে রাজি না হওয়ায় কিশোরী কনেকে মারধর করার দাবিতে ছড়ানো ভিডিওর সঙ্গে Wedding Studio পেজে প্রকাশিত ভিডিওর সাদৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা, ‘জো’র করে বিয়ে দেওয়াতে কিছুতেই কবুল বলতেছে না কনে II কবুল বলার পরের মুহূর্ত II গ্রামে বিয়ে।’ (বানান অপরিবর্তিত)

ভিডিওতে বরের নাম আব্দুল মান্নান এবং তাঁর পৈত্রিক নিবাস চিনিবন্দর থানা, দিনাজপুর জেলা উল্লেখ করা হয়েছে। কনের নাম ফাহিমা মনি ও তাঁর পৈত্রিক নিবাস হবিগঞ্জ জেলা উল্লেখ করা হয়েছে।

৫ লাখ ১১ হাজার ফলোয়ার বিশিষ্ট Wedding Studio ফেসবুক পেজটিতে ২০২৪ সালের ২৬ এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত অসংখ্য ভিডিও ও রিলস আপলোড করা হয়েছে। সবগুলো ভিডিও বিয়ের অনুষ্ঠান নিয়ে। এসব অনুষ্ঠানে একই ব্যক্তিদের বিভিন্ন সময় উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর ব্যক্তিদের একই পোশাকে গত ১২ মে থেকে একাধিক ভিডিও ও ছবি পোস্ট করা হয়েছে (, , , , , )। গত ১৫ মে ওই বিয়ের অনুষ্ঠানের একটি ফটো অ্যালবাম পোস্ট করা হয়েছে। ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ‘মেয়ে রাজি না কিন্তু মেয়ের মা রাজি কারণ বর সরকারি চাকরি করে।’

এই ফেসবুক পেজটিতে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে থাকা ব্যক্তিদের আরও একাধিক বিয়ের ভিডিওতে (, ) পাওয়া যায়।

Wedding Studio নামে ফেসবুক পেজের ভিডিওর ব্যক্তিদের সাদৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

Wedding Studio নামে ফেসবুক পেজের ভিডিওর ব্যক্তিদের সাদৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

এই ফেসবুক পেজের ইন্ট্রোতে লেখা আছে, ‘বন্ধুরা, আমি দেলওয়ার। আমি সৌদি আরবে থাকি। আমরা কাউকে আঘাত করার জন্য কোনো ভিডিও আপলোড করি না, শুধু স্মৃতি ধরে রাখার জন্য করে থাকি। আমরা কোনো বিয়ের অনুষ্ঠান করি না। আপনাদের কোনো অভিযোগ থাকলে আমাদের জানান।’ (ইংরেজি থেকে বাংলায় অনূদিত)

একটি ই-মেইল ঠিকানা এবং হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরই ইন্ট্রোতে যুক্ত করা হয়েছে।

সুতরাং, এই পেজের ভিডিওতে দেখানো বিয়ের দৃশ্যগুলো বাস্তব ঘটনা নয় বলেই ধরে নেওয়া যায়।

Wedding Studio নামে ফেসবুক পেজ। ছবি: স্ক্রিনশট

Wedding Studio নামে ফেসবুক পেজ। ছবি: স্ক্রিনশট

পেজটিতে গত ১৭ মে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে ‘AN Media 24’ লেখাসহ একটি লোগো দেখা যায়। এর সূত্র ধরে ‘AN Media 24’ নামে একটি ফেসবুক পেজ পাওয়া যায়। এই পেজেও শুধু বিয়ের ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে।

এই পেজের একাধিক ভিডিওতে (, , ) Wedding Studio নামে ফেসবুক পেজের ভিডিওতে থাকা কয়েকজন ব্যক্তিকে দেখা যায়।

সুতরাং, রাজধানীর ধামরাইয়ে প্রবাসীর সঙ্গে কিশোরীর জোরপূর্বক বিয়ে এবং কবুল না বলায় কনেকে মারধর করা হচ্ছে দাবিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো ভিডিওটি কোনো বাস্তব ঘটনা নয়। মূলত একটি দল সাজানো বিয়ের অনুষ্ঠান ফেসবুকে পোস্ট করে।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত