অভিযানে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডল—এমন দাবিতে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটি বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, পেজ ও গ্রুপ থেকে একই ক্যাপশনে ছড়ানো হচ্ছে। ভিডিওতে দেখা যায়, রাতেরবেলা রাস্তার মাঝখানে এক ব্যক্তিকে কয়েকজন মিলে কিলঘুষি মারছে। একজনকে হেলমেট দিয়ে মাথায় আঘাত করতে দেখা যায়। মারধরের শিকার ব্যক্তি মধ্যবয়সী, পরনে শার্ট, মাথায় টাক।
Amar Desh নামে ফেসবুক পেজ থেকে আজ বুধবার (২১ মে) সকাল ৮টা ২২ মিনিটে পোস্ট করা ভিডিওটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। এর ক্যাপশনে লেখা, ‘সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনকারীকে এরকম অবমাননা করার সাহস কোথায় পেল??? সকলের প্রিয় ভোক্তা অধিকারের ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল জব্বার মন্ডল স্যার কে এভাবেই মারপিট এবং হেনস্থা করল, তীব্র নিন্দা জানাই। এই ঘটনার সঠিক বিচার চাই।’ (বানান অপরিবর্তিত)
সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ভিডিওটি ৫২ হাজার বার দেখা হয়েছে এবং ৭৭৩টি রিঅ্যাকশন পড়েছে। এতে ২২৯টি কমেন্ট পড়েছে এবং শেয়ার হয়েছে ১ হাজার ১০০।
Piash M Rahman, Jahidhasan Hasan, M. A. Jalil Mia নামে ফেসবুক অ্যকাআউন্ট থেকে একই ক্যাপশনে ভিডিওটি ছড়ানো হয়েছে।
ভিডিওটির কিছু কি–ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবির সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর সাদৃশ্য পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি গত ১৪ মে প্রকাশিত। এর সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে মারধরের শিকার ব্যক্তির মুখমণ্ডল, রাস্তা, মারধরকারী, তাদের পোশাক, আশেপাশের দৃশ্যের মিল রয়েছে।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ১৩ মে রাত ৯টার দিকে সিলেট নগরীর রিকাবীবাজার এলাকায় একটি রেস্টুরেন্টে খেতে যান নির্মলেন্দু দাশ রানা (৪৫) নামে এক ব্যক্তি। সেখানে একদল লোক তাঁকে মারধর করে পুলিশে দেয়। মারধরের শিকার ব্যক্তি সিলেটের হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার করগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ও পৌর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক।
স্থানীয় পুলিশ সূত্রে প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৪ সালে জামায়াতের মিছিলে হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে নির্মলেন্দু দাশ রানাকে প্রধান আসামি করে আওয়ামী লীগের ২৬ নেতার বিরুদ্ধে নবীগঞ্জ থানায় মামলা হয়। ২০২৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর মামলাটি করেন জামায়াতে ইসলামীর সদর ইউনিয়ন সভাপতি শাহ মো. আলাউদ্দিন।
এরপর টাকার বিনিময়ে মামলাটি আপসের অভিযোগ ওঠে শাহ আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় জামায়াতে ইসলামী শাহ আলাউদ্দিনকে বহিষ্কার করে। পরে ঢাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগে নির্মলেন্দু দাশ রানাকে আসামি করে আরেকটি মামলা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সেদিন তিনি ও নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আরও কয়েকজন নেতা রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে স্থানীয় কয়েকজন রানাকে পিটিয়ে আহত করেন। পরে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের লামাবাজার পুলিশ ফাঁড়ির একটি দল রানাকে উদ্ধার করে।
জাতীয় দৈনিক প্রথমআলোর ওয়েবসাইটে গত ১৪ মে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য পাওয়া যায়। এ ছাড়া প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবির সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর মারধরের শিকার ব্যক্তির মুখমণ্ডল, তাঁর পোশাকের মিলও পাওয়া যায়।
এছাড়া, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডলকে মারধরের কোনো ঘটনা নিয়ে দেশীয় সংবাদমাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডলকে মারধর করা হয়েছে দাবিতে ছড়ানো তথ্যটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, গত ১৩ মে রাতে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার করগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান নির্মলেন্দু দাশ রানাকে সিলেট নগরীতে স্থানীয়রা মারধর করে। ভিডিওটি সেই ঘটনার।