বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীরা কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতিকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে—এমন দাবিতে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হয়েছে। ভিডিওটি বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে একই ক্যাপশনে ছড়ানো হচ্ছে। ভিডিওতে দেখা যায়, রাতেবেলা অর্ধনগ্ন অবস্থায় এক ব্যক্তি মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে কাতরাচ্ছেন। আরেকজন ব্যক্তি এসে তাঁর শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে পুরো শরীরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে। ব্যক্তিটি মাটিতে গড়াগড়ি করছেন। ভিডিওতে আরেকজনকে একটি পাত্র হাতে দেখা যায়।
‘Dr-Rabbi Alam’ নামের ফেসবুক পেজ থেকে আজ শনিবার (২৪ মে) ভোর ৬টা ৩২ মিনিটে মিনিটে পোস্ট করা ভিডিওটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। এর ক্যাপশনে লেখা, ‘কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি কে জামাত বি এন পির রাজাকারেরা মেরে আগুন দিয়ে দিছে। আইয়া মে জাহেলিয়াত কেও হার মানিয়েছে।’ (বানান অপরিবর্তিত)
আজ শনিবার বেলা ১২টা পর্যন্ত ভিডিওটি ২ লাখ ৯৮ হাজারবার দেখা হয়েছে এবং ২ হাজার ২০০ রিঅ্যাকশন পড়েছে। এতে ৪৪১টি কমেন্ট পড়েছে এবং শেয়ার হয়েছে ২ হাজার ৮০০ বার।
ভিডিওটি সত্য মনে করে অনেকে কমেন্ট করেছে। Omar Faruk নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লিখেছে, ‘বেদনাদায়ক দৃশ্য টি।। এর জন্য দায়ী শেখ হাসিনা র অতি অহংকারী এবং আত্মবিশ্বাসী।। অবশ্যই বিগত সরকারের উচিত ছিলো সব কিছু হিসাব নিকাশ করে চলা!’ (বানান অপরিবর্তিত)
মাওলানা বেলাল হোসাইন লিখেছে, ‘আমার বাংলাদেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, আল্লাহ তুমি হেফাজত করো বাংলার মানুষ গুলোকে।’ (বানান অপরিবর্তিত)
জয় বাংলা, Nasima Sultana Mohua ও নাঙ্গলকোট উপজেলা ছাত্রলীগ নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একই ক্যাপশনে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে।
ভিডিওটির কিছু কি–ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে Borderland Beat নামে একটি ব্লগ সাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ভিডিওটি পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি ২০২৩ সালের ৫ মে প্রকাশিত। এর সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর ব্যক্তির দেহ কাঠামো, আগুনের দৃশ্য, একজনের হাতে কন্টেইনার সদৃশ পাত্র— এসব দৃশ্যের মিল রয়েছে।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মেক্সিকোর মাদক পাচারকারী চক্র কার্টেল দেল গলফোর সশস্ত্র শাখা গ্রুপো এসকরপিয়নের সদস্যরা রাতে জেতা ভিয়েজা এসকুয়েলা নামে আরেকটি মাদক পাচারকারী চক্রের সদস্যকে নগ্ন করে পুড়িয়ে মেরে ফেলে।
এ ছাড়া, Borderland Beat নামে ব্লগটিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ভিডিওতে স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলতে শোনা যাচ্ছে।
যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংবাদপত্র ডেইলি স্টারের ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ৬ মে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনেও একই তথ্যে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর একাধিক দৃশ্যের স্থিরচিত্র পাওয়া যায়।
এই প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, মেক্সিকোর মাদক পাচারকারী চক্র গ্রুপো এসকরপিয়ন ও জেতা ভিয়েজা এসকুয়েলার মধ্যে বিরোধ রয়েছে। পুড়িয়ে মারার ঘটনাটি দুই চক্রের দ্বন্দ্বের জেরেই ঘটেছে। কার্টেল দেল গলফো চক্রটি মেক্সিকোর পুরোনো মাদক পাচারকারী চক্রগুলোর মধ্যে একটি। উত্তর-পূর্ব সীমান্তবর্তী রাজ্য তামাউলিপাসে এদের প্রভাব-প্রতিপত্তি রয়েছে।
এ ছাড়া, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতিকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে— এমন দাবি সংশ্লিষ্ট কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দেশীয় সংবাদমাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে এমন কোনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীরা কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতিকে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরে ফেলেছে— এই দাবি সঠিক নয়। একই দাবিতে ছড়ানো ভিডিওটিও পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৩ সালের মে মাসের শুরুতে মেক্সিকোর এক মাদক পাচারকারী চক্র তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীর সদস্যকে পুড়িয়ে মারার দৃশ্য এটি।