Homeঅর্থনীতিআমদানি পণ্যে করের চাপ আরও বাড়ছে

আমদানি পণ্যে করের চাপ আরও বাড়ছে


২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট সাধারণ মানুষের ব্যয়ের ঝুঁকি আরও বাড়াতে চলেছে। মূল লক্ষ্য রাজস্ব আদায় বাড়ানো হলেও এর পথ নির্বাচনে চাপ এসে পড়ছে প্রত্যক্ষভাবে আমদানিনির্ভর পণ্যে। কারণ, সরকার বাণিজ্যিক আমদানির ওপর অগ্রিম কর বাড়িয়ে ৫ থেকে ৭ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত করার চিন্তা করছে, যা একধাক্কায় বাড়িয়ে দেবে বহু আমদানি পণ্যের দাম। মূলত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের যুক্তি দেখিয়ে বাজেটে এ পদক্ষেপ নেওয়া হলেও বাস্তবে এর নেতিবাচক প্রভাব প্রথমে পড়বে ভোক্তার ওপর।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবারের মতো এবারও আমদানি পর্যায়ে রাজস্ব আদায়ের ওপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কারণ, অভ্যন্তরীণ ভ্যাট সংগ্রহে দুর্বলতা এখনো কাটেনি। এনবিআরের ভাষায়, দেশে পণ্য বিক্রির সময় দুর্বল ভ্যাট আদায় এবং পুনরায় কর ফেরত দিতে হয়। ফলে নিরাপদ পথ হিসেবে আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম কর বাড়ানোকে বেছে নেওয়া হয়েছে।

কিন্তু এ নিরাপত্তার খরচ গুনতে হবে ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের। পোশাক, খাদ্যপণ্য, ফল, মসলা, শিশুখাদ্য, সিরামিকস, রিকন্ডিশন্ড গাড়ি, চিকিৎসা সরঞ্জামসহ অনেক পণ্য রয়েছে বাণিজ্যিক আমদানির আওতায়। অগ্রিম কর বৃদ্ধির ফলে এসব পণ্যের দাম বাড়বে। ইতিমধ্যে ফল আমদানিকারক সমিতি জানিয়েছে, আপেল, কমলা, আঙুরের মতো বিদেশি ফলের চাহিদা ইতিমধ্যে হ্রাস পাচ্ছে; নতুন কর আরোপে তা আরও দুর্বল হবে।

বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকেলস ইম্পোর্টারস অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আব্দুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গাড়ির বাজার এমনিতেই মন্দা। এখন অগ্রিম কর বাড়ালে মানুষ গাড়ি কেনায় আরও পিছিয়ে যাবে। সরকার হয়তো রাজস্ব পাবে, কিন্তু অর্থনীতির গতিশীলতা কমবে।’

এই সমালোচনায় সুর মিলিয়েছেন অর্থনীতিবিদেরাও। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান ড. জাইদি সাত্তার বলেন, ‘আমদানিতে বাড়তি কর আরোপ প্রতিযোগিতাকে কমিয়ে দেবে, যা অর্থনীতির জন্য দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিকর।’

বাজেটের করনীতিতে শুধু চাপের গল্প নেই; ব্যক্তিপর্যায়ে স্বস্তির খানিকটা বাতাসও আনার চেষ্টা করা হয়েছে। করমুক্ত আয়সীমা ২৫ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৩ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় উন্নীত করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে। এর ফলে নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির ওপর করের চাপ খানিকটা কমবে।

বাজেট প্রস্তুতকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ব্যক্তিগত করকাঠামো অপরিবর্তিত রাখা হলেও আয়সীমার এই পরিবর্তনে প্রায় ৮ লাখ নতুন করদাতার ওপর বোঝা কিছুটা হালকা হবে।

এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘বর্তমান মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপটে করমুক্ত আয়সীমা না বাড়ালে মধ্যবিত্ত শ্রেণি আরও চাপে পড়ত। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবধর্মী।’

একদম বিপরীত দিকে অবস্থান করছে মোবাইল খাত। বাজেটে দেশে উৎপাদিত মোবাইল ফোনের ওপর ভ্যাট বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫ থেকে ১০ শতাংশে নেওয়া হচ্ছে। আমদানিকৃত ফোনে এই হার আরও বেশি। এর ফলে মোবাইল ফোনের দাম বাড়তে পারে, বিশেষত যাঁরা দেশীয় ব্র্যান্ডের কম দামের ফোন কিনে থাকেন, তাঁদের ওপর চাপ পড়বে।

মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি রেজওয়ানুল হক বলেন, ‘এখন বাজারে বৈধ ব্যবসায়ীদের টিকে থাকা কঠিন। ভ্যাট বাড়ালে বৈধ বিক্রেতারা আরও কোণঠাসা হবেন, অথচ অবৈধ চোরাই ফোনে কোনো কর নেই।’

অন্যদিকে স্বস্তির দিকও রয়েছে। স্থানীয়ভাবে সরবরাহকৃত পণ্যের ওপর ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের পরিকল্পনা রয়েছে বাজেটে। ফলে দেশীয় উৎপাদকেরা কিছুটা বাড়তি সুবিধা পেতে পারেন। পাশাপাশি শিল্প উপকরণের ওপর আরোপিত ৩ শতাংশ অগ্রিম কর কমিয়ে ২ শতাংশে নামিয়ে আনা হতে পারে। এতে উৎপাদন খরচ কিছুটা হ্রাস পাবে।

সরকার এসব পদক্ষেপকে রাজস্ব ঘাটতি পূরণ ও ঘাটতিমূলক বাজেটের ভারসাম্য রক্ষার হাতিয়ার হিসেবে দেখছে। মূল বাজেট কাঠামোয় আগামী অর্থবছরে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট হতে পারে, যেখানে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। বিশাল ঘাটতি মোকাবিলায় সরকার বিকল্প উৎস না পেয়ে করকাঠামোয় নানা রদবদল আনছে।

বাস্তবতায় এই করনীতির ভার এসে পড়ছে সাধারণ মানুষের জীবনে। দ্রব্যমূল্য এমনিতে চড়া, তার ওপর কর বৃদ্ধির ঢেউ আমদানি পণ্যের দামে বাড়তি চাপ তৈরি করবে। বাজেটে গৃহীত পদক্ষেপগুলো রাজস্ব আদায় বাড়ালেও তা কীভাবে জনগণের জীবনমানের উন্নয়নে কাজে লাগবে, সে প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত