রাজশাহীতে ১১তম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালিত হয়েছে। কিছু বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ ও কিছু বিদ্যালয়ে পাঠদান চলেছে।
রাজশাহী নগরীর সুলতানাবাদ এলাকার কৃষ্ণকান্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষকরা বসে থেকে সময় কাটাচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা আসলেও তারা কেউ ছবি আঁকছে বা গল্প লিখছে। তাদের সহযোগিতা করছেন শিক্ষকরা। স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফাহিমা ইসলাম জানান, শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করছেন। তবে শিক্ষার্থীদের পড়াও বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তারা পিছিয়ে না পড়ে সেদিকেও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে।
রাজশাহী নগরীর মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান চলছে। শিক্ষকরা নিয়মিতভাবে ক্লাস নিচ্ছেন আর শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত রয়েছে স্বাভাবিকভাবেই। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক হোসনে আরা জেসমিন জানান, বিদ্যালয়ে সাত জন শিক্ষক রয়েছেন। কেউ কর্মবিরতিতে নেই। তাই পাঠদান অব্যাহত রয়েছে।
রাজশাহী নগরীর খাদেমুল ইসলাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক মাহমুদা বেগম বলেন, ‘আমরা মে মাসের শুরু থেকে কর্মসূচি পালন করছি। প্রথমে এক ঘণ্টা, পরে দুই ঘণ্টা, এরপর অর্ধদিবস। এখন পূর্ণদিবস কর্মবিরতি চলছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বর্তমানে ১৩তম গ্রেডে আছি। চাচ্ছি ১১তম গ্রেড। সরকার দিতে চায় ১২তম গ্রেড। ১১তম গ্রেডে একটি সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করতে চায়, যেটা আমরা চাই না। এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জামিলা তারিন বলেন, ‘শিক্ষকরা কর্মবিরতিতে রয়েছেন। কিছু শিক্ষার্থী এলেও পাঠদান হচ্ছে না।’
শিক্ষার্থীরা বলে, ‘শিক্ষকরা স্কুলে এসেছেন। আমরাও স্কুলে এসেছি। কিন্তু পড়ালেখা হচ্ছে না।’
কয়েকজন অভিভাবক বলেন, ‘এভাবে কর্মবিরতি চলতে থাকলে ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা ব্যাহত হবে। তাই সরকারকে দ্রুত এর সমাধান করতে হবে।’
রাজশাহীর গ্রামাঞ্চলেও একই চিত্র দেখা গেছে। প্রায় প্রতিটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কর্মবিরতিতে রয়েছেন। ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক ঐক্য পরিষদ’-এর ডাকে সারা দেশের মতো রাজশাহীতেও কর্মসূচি চলছে। তাদের তিন দফা দাবির মধ্যে রয়েছে– সহকারী শিক্ষক পদকে শুরুর পদ হিসেবে ধরে ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ; ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা নিরসন; শতভাগ পদোন্নতির ভিত্তিতে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ ও দ্রুত পদোন্নতির ব্যবস্থা।
এর আগে ৫ থেকে ১৫ মে পর্যন্ত এক ঘণ্টা, ১৬ থেকে ২০ মে পর্যন্ত দুই ঘণ্টা এবং ২১ থেকে ২৫ মে পর্যন্ত অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকরা। এরপর সোমবার থেকে শুরু হয়েছে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি।
এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম আনোয়ার হোসেনকে ফোন দেওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমি বাজারে। এ বিষয়ে পরে কথা হবে।’
সার্বিক বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় উপ-পরিচালকের কার্যালয় (প্রাথমিক শিক্ষা) সহকারী পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) নূর আখতার জান্নাতুল ফেরদৌসকে মঙ্গলবার বিকালে মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেনি।