[ad_1]
গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরে মঙ্গলবার (২৭ মে) বিকেলে চালু হওয়া মার্কিন-সমর্থিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে ক্ষুধার্ত গাজার বাসিন্দারা ছুটে গেলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুলিতে বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে আজ বুধবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলু।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “তথাকথিত বাফার জোনে ত্রাণ বিতরণের জন্য ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর পরিকল্পনা ভয়াবহভাবে ব্যর্থ হয়েছে।”
এতে বলা হয়েছে, “হাজার হাজার ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে ছুটে যাওয়ার পর ইসরায়েলি বাহিনী গুলি চালায়।”
বিবৃতিতে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, “আজ যা ঘটেছে তা অনাহার, অবরোধ এবং বোমাবর্ষণের নীতির মাধ্যমে ইচ্ছাকৃতভাবে তৈরি করা মানবিক সংকট মোকাবিলায় দখলদার বাহিনীর ব্যর্থতার অকাট্য প্রমাণ।”
অফিসটি বলেছে, “মৃত্যু, গুলিবর্ষণ ও ক্ষুধার হুমকির মুখে সীমিত সাহায্য বিতরণের জন্য বাফার-জোনে ত্রাণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা সংকট মোকাবিলার প্রকৃত উদ্দেশ্যকে প্রতিফলিত করে না, বরং অনাহার দীর্ঘায়িত করা এবং ফিলিস্তিনি সমাজকে ভেঙে ফেলার লক্ষ্যে একটি নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রকৌশলের মূর্ত প্রতীক।”
মিডিয়া অফিস গাজায় খাদ্য সরবরাহের পতনের জন্য ইসরায়েলকে সম্পূর্ণরূপে দায়ী করেছে, সাহায্যকে ‘যুদ্ধের অস্ত্র ও ব্ল্যাকমেইলের হাতিয়ার’ হিসাবে ব্যবহারের নিন্দা জানিয়েছে। এছাড়াও সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে ত্রাণ সাহায্য প্রবেশে ইসরায়েলি বাধার তীব্র সমালোচনা করেছে।
মিডিয়া অফিস জাতিসংঘ এবং নিরাপত্তা পরিষদকে “ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ করার জন্য জরুরিভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার, বিধিনিষেধ ছাড়াই ত্রাণ প্রবেশে সীমান্ত ক্রসিংগুলো খুলে দেওয়ার এবং মানবিক সংস্থাগুলোকে দখলদারদের হস্তক্ষেপ ও এজেন্ডা থেকে স্বাধীনভাবে তাদের মিশন পরিচালনা করতে সক্ষম করার আহ্বান জানিয়েছে।”
অফিসটি অনাহারের অপরাধ নথিভুক্ত করার জন্য এবং যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরায়েলি নেতাদের বিচারের আওতায় আনার জন্য স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিটি প্রেরণের দাবিও করেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ইয়েদিওথ আহরোনোথ জানিয়েছে, ক্ষুধার্ত গাজাবাসীর চাপে মার্কিন-সমর্থিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র ‘গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)’ এর মার্কিন কর্মীদের রাফাহ থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
ইসরায়েলের আরেকটি সংবাদমাদ্যম হায়োম জানিয়েছে, মার্কিন কর্মীদের সরিয়ে নেওয়ার পর ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ত্রাণ বিতরণ স্থানে সেনা মোতায়েন করেছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, মার্কিন ও ইসরায়েল-সমর্থিত সংস্থা জিএইচএফ মঙ্গলবার বিকেলে রাফাহর তাল আল-সুলতান এবং মোরাগ করিডোর এলাকায় ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র চালু করার পর সেখানে হাজারো পুরুষ, নারী ও শিশুকে ছুটে আসতে দেখা যায়। কিছুক্ষণ পরেই বিশাল জনতা কেন্দ্রের কাঁটাতারের বেড়া ও মাটি দিয়ে তৈরি বেড়া ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে।
স্থানীয়রা জানান, মানুষজন খাবারের প্যাকেট ছিনিয়ে নিচ্ছিল এবং ইসরায়েলি সেনারা গুলি ছুঁড়েছিল। এক ব্যক্তি বিবিসি আরবিকে বলেন, “একবারে মাত্র ৫০ জনকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল, এরপর বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়—মানুষ গেট টপকে উঠে, একে অপরকে আক্রমণ করে এবং ত্রাণ নিয়ে নেয়। এসময় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গুলি ছুড়ে।”
তিনি আরো বলেন, “এটা ছিল অত্যন্ত অপমানজনক অভিজ্ঞতা। আমরা চরম ক্ষুধার্ত।”
এক নারী বলেন, ‘ক্ষুধা আর দারিদ্র্য সবাইকে গ্রাস করেছে। মানুষ এতটাই ক্লান্ত যে নিজের জীবন ঝুঁকিতে ফেলেও খাবারের জন্য কিছু করতে প্রস্তুত।’
জাতিসংঘের মুখপাত্র স্তেফান দুজারিক এক বিবৃতিতে বলেছেন, “জিএইচএফ-এর বিতরণ কেন্দ্রে যা ঘটছে, সেই ভিডিওগুলো আমাদের হৃদয় ভেঙে দিয়েছে। আমাদের এবং আমাদের অংশীদারদের হাতে একটি সুসংগঠিত পরিকল্পনা রয়েছে, যার মাধ্যমে আমরা গাজাবাসীর কাছে ত্রাণ পৌঁছাতে পারি।”
জিএইচএফ মার্কিন অস্ত্রধারী নিরাপত্তা ঠিকাদারদের ব্যবহার করে এবং জাতিসংঘকে উপেক্ষা করে গাজায় ত্রাণ সরবরাহের চেষ্টা করছে।
জাতিসংঘ এবং বেশিরভাগ ত্রাণ সংস্থা জিএইচএফ-এর সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, কারণ এটি মানবিক নীতিমালার পরিপন্থী এবং ত্রাণকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের আশঙ্কা তৈরি করেছে।
জিএইচএফ জানিয়েছে, তারা দক্ষিণ ও মধ্য গাজায় চারটি বিতরণ কেন্দ্র স্থাপন করবে, যার লক্ষ্য এই সপ্তাহের মধ্যেই ১০ লাখ মানুষকে খাওয়ানো। এই কেন্দ্রগুলোতে প্রবেশের জন্য ফিলিস্তিনিদের পরিচয় যাচাই ও হামাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে স্ক্রিনিংয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। এই ব্যবস্থাকে মানবিক নীতির পরিপন্থী হিসেবে দেখছে জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থা।
ইসরায়েল গত ২ মার্চ থেকে গাজা ক্রসিং বন্ধ করে রেখেছে, যা ছিটমহলে ইতিমধ্যেই তীব্র মানবিক সংকটকে আরো গভীর করে তুলেছে।
যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজার বিরুদ্ধে নৃশংস আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে, ৫৪ হাজারেও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
[ad_2]
Source link