Homeলাইফস্টাইলবর্ণিল ব্যাংকক

বর্ণিল ব্যাংকক

[ad_1]

‘স্যার, হুইচ সিটি আর ইউ ফ্রম?’

‘ঢাকা।’

‘হোয়াট ইজ দ্য বেস্ট ইন ইওর সিটি?’

‘ফুড।’

‘আওয়ার থাই ফুড ইজ দ্য বেস্ট ইন দ্য ওয়ার্ল্ড।’

‘ওকে, লেট মি চেক ইট আউট।’

হাসিমুখে ইমিগ্রেশন অফিসার ‘সাওয়াদি’ বলে পাসপোর্টটা ফেরত দিলেন। এটা এমন একটা শব্দ, যা দিয়ে থাই ভাষায় শুভসকাল, শুভ অপরাহ্ণ, শুভরাত্রি—সবকিছুই বোঝানো যায়। কিন্তু থাই ভাষা আদতে এতটা সহজ নয়। ৩২টা স্বরবর্ণ ও ৪৪টা ব্যঞ্জনবর্ণ থাকায় কাছাকাছি উচ্চারণের অনেক অর্থ হতে পারে। সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্টে তখন তাপমাত্রা আমাদের দেশের মতোই, ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, হিউমিডিটি ৭০ শতাংশ। কিন্তু কর্তব্যরত স্টাফদের মানসিক আচরণে ১০০ শতাংশ আন্তরিকতা।

‘হ্যালো, আই অ্যাম কোকো। ইওর ট্যুর গাইড।’

একটা লম্বা ছাতা মাথায় ছোট একটা বাঁদর ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়ান কোকো সাহেব, আর অনেক কথা বলেন। প্রথমটা অবশ্য তাঁকে ভিড়ের মধ্যে খুঁজে বের করার জন্য, দ্বিতীয়টা তাঁর পেশার জন্য। কোকো সাহেব অনবরত কথা বলেই যান, কিন্তু আমার কানে তেমন কোনো কথাই যায় না। ঝাঁ-চকচকে সুবর্ণভূমি বিমানবন্দর থেকে শহরের দিকে যাত্রা করার সময় চোখে পড়ে আধুনিক স্থাপত্যের বিশাল বিশাল ভবন আর দ্রুতগতির ফ্লাইওভার। ট্যুরিস্ট বাসে বসে আমি দেখে চলি রাস্তার সৌন্দর্য। একটুখানি পরপর ওভারব্রিজ, আন্ডারপাস, বিটিএস মেট্রোরেল, নিচে ছোট ছোট নদীপথ। জ্যাম আছে যদিও প্রতিটা সিগন্যালে, বিশেষ করে ব্যস্ত সময়গুলোতে, তবে রাস্তার পাশে কোনো আবর্জনা নেই। উঁচু উঁচু ইমারতের ভিড়ে টিকে আছে সবুজের সমারোহ। সে এক দারুণ চোখের শান্তি।

‘ইজ দিস অ্যান ইন্ডিয়ান গড?’

‘নো, ইট’স আ থাই গড অব ব্লেসিংস!’

সাহায্য নিলাম গুগল জেমিনাই-এর। জানা গেল, সান ফ্রা ফুম নামে ছোট্ট একটা বাড়ির মতো কাঠামো মোটামুটি ব্যাংককের বড় বড় সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শপিং মল বা হোটেলের বাইরে দেখা যায়। লোকজন বিশ্বাস করে যে এটি স্থানীয় আত্মাদের বাসস্থান এবং তারা সৌভাগ্য ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সেখানে খাদ্য ও পানীয় নিবেদন করে। এ ছাড়া ব্যাংককের হৃদয়জুড়ে রয়েছে বুদ্ধের মন্দির ও রাজপ্রাসাদের সমারোহ। তার মধ্যে প্রথমে বলতে হবে, ভোরের মন্দির বা ওয়াট অরুণের নাম—চাও ফ্রায়া নদীর তীরে অবস্থিত দৃষ্টিনন্দন এক বৌদ্ধমন্দির। সূর্যাস্তের সময় মন্দিরটির মার্বেলের গায়ে পড়া রশ্মি এক অনন্য সৌন্দর্য সৃষ্টি করে। এখান থেকে কয়েক পা দূরেই গ্র্যান্ড প্যালেস, থাইল্যান্ডের রাজকীয় ঐতিহ্যের প্রতীক। সোনালি রঙের অলংকৃত এই প্রাসাদ থাইল্যান্ডের রাজাদের সরকারি বাসভবন। এর ভেতরে রয়েছে থাইল্যান্ডের অন্যতম পবিত্র পান্না বুদ্ধের মন্দির বা ওয়াট ফ্রা কেউ, যেখানে রয়েছে স্বর্ণখচিত মূর্তি ও নকশাদার দেয়ালচিত্র। এ ছাড়া রয়েছে ওয়াট ফো, যেখানে অবস্থিত বিখ্যাত রেক্লাইনিং বুদ্ধমূর্তি। প্রায় ৪৬ মিটার লম্বা এই মূর্তি দর্শনার্থীদের বিস্ময়ে বিমূঢ় করে।

ঘুরে দেখার পাশাপাশি যে কয়টি কারণে ব্যাংকক ট্যুরিস্টদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে জমজমাট শপিং মল, মুখরোচক খাবার আর প্রাণবন্ত নাইট লাইফ। রয়েছে যেমন খরুচেদের জন্য সিয়াম প্যারাগন, এমবিকে সেন্টার বা টার্মিনাল ২১, তেমনি স্বল্প বাজেটে কেনাকাটার জন্য রয়েছে চাতুচাক উইকেন্ড মার্কেট ও ইন্দিরা স্কয়ার। সুযোগ আছে রাতের বেলা আসিয়াটিক রিভারফ্রন্টে হাঁটতে হাঁটতে শপিং করার। থাই সিল্ক, হস্তশিল্প, আধুনিক ফ্যাশন—সবই সেগুলোতে পাওয়া যায়। সব মার্কেটেই রয়েছে স্যুভেনির শপ।

WhatsApp-Image-2025-05-20-at-12.41

খাবারের কথা না বললেই নয়। থাই রান্না সারা বিশ্বে খ্যাতি অর্জন করেছে। ব্যাংকক সেই স্বাদের এক স্বর্গরাজ্য। রাস্তার পাশের খাবার থেকে শুরু করে বিলাসবহুল রেস্তোরাঁ পর্যন্ত—সব জায়গাতেই রয়েছে অথেনটিক থাই খাবার চেখে দেখার সুযোগ। টম ইয়াম, প্যাড থাই, গ্রিন কারি, ম্যাঙ্গো স্টিকি রাইসসহ অনেক থাই খাবারের স্বাদ জিবে লেগে থাকার মতো। তবে তার জন্য যে সব সময় বিলাসবহুল রেস্টুরেন্টে বসতে হবে, তেমনটা নয়। থাই রান্নার স্বাদ নিতে হলে রাস্তার ধারের স্টলই যথেষ্ট।

ব্যাংকক হচ্ছে রাতের আলোয় উদ্ভাসিত এক শহর। সন্ধ্যা নামলেই ব্যাংকক হয়ে ওঠে আরও প্রাণবন্ত। বিভিন্ন রোডসাইড ক্যাফেতে চলে সংগীত, নাচ আর স্ট্রিট ফুডের মেলা। আলোঝলমলে হয়ে ওঠে বিলাসবহুল রুফটপ বার আর নাইট ক্লাবগুলো। আর লাইভ মিউজিক ভেন্যুতে রাতজাগা পর্যটকের ভিড় তো লেগেই থাকে। আরেকটা কথা বলতেই হবে, শহরজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ম্যাসাজ সেন্টার, যেগুলো অনেক রাত পর্যন্ত খোলা থাকে। পর্যটকদের দিনের ক্লান্তি দূর করতে যাদের জুড়ি নেই।

WhatsApp-Image-2025-05-28-at-5.05

নদীর জীবন ব্যাংককের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। চাও ফ্রায়া নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে শহরের এক ভিন্ন চিত্র। নদীর বুকে নৌকায় ভ্রমণের অভিজ্ঞতা অসাধারণ। একদিকে যেমন দেখা যায় নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা পুরোনো দিনের বাড়িঘর, তেমনই চোখে পড়ে আধুনিক আকাশচুম্বী অট্টালিকা। ওয়াটার ট্যাক্সিও সেখানকার কিছু মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। শহরের মধ্যে ঘোরাঘুরির জন্য টুক টুক বা ট্যাক্সিতে চড়া যেতে পারে। তবে

চড়ার আগে ভাড়া ঠিক করে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। যানজট এড়াতে ব্যবহার করা যেতে পারে বিটিএস স্কাই ট্রেন। গরমের সময়ের তাপমাত্রা মোটামুটি আমাদের দেশের মতো হওয়ায় নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি শীতল আবহাওয়া হতে পারে ভ্রমণের জন্য আদর্শ সময়।

WhatsApp-Image-2025-05-28-at-5.05

দেখতে দেখতেই ট্যুরের ভালো সময়গুলো ফুরিয়ে আসে। পেছন ফিরে তাকালে দেখা যায়, আছে শুধু একরাশ স্মৃতি আর কিছু স্যুভেনির। আর তেমন কিছু স্মৃতির জন্য ব্যাংকক হতে পারে দারুণ একটা ঠিকানা। ব্যাংকক কেবল একটি শহর নয়, এটি এক জীবন্ত অনুভূতি। এখানে প্রতিটি মুহূর্তে লুকিয়ে আছে নতুন আবিষ্কার, রোমাঞ্চ আর সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি।

ব্যস্ত নগরজীবন আর প্রশান্ত মন্দির—এই দ্বৈত সত্তাই ব্যাংকককে করে তুলেছে অনন্য। সে কারণে পরবর্তী সময়ে আপনি যদি ছুটির পরিকল্পনা করতে চান, তাহলে ব্যাংককের নামটি মনে রাখুন; আর নিজের চোখে দেখে আসুন এই মহাদেশীয় মোহনীয়তা।



[ad_2]

Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত