Homeজাতীয়ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প রক্ষা করা জরুরি

ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প রক্ষা করা জরুরি

[ad_1]

পৃথিবীতে মানবসভ্যতার প্রাচীন শৈল্পিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মৃৎশিল্প। এটা আমাদের বাঙালিরও আবহমান গ্রাম বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্য বহন করে।মৃৎবলতে মৃত্তিকা বা মাটিকে বোঝানো হয় এবংশিল্পবলতে দক্ষতা সৃজনশীলতার সমন্বয়ে তৈরী এমন জিনিসকে বোঝায় যা নান্দনিক সৌন্দর্য বহন করে। অর্থাৎ, মৃৎশিল্প বলতে মাটি দিয়ে তৈরী অনিন্দ্যসুন্দর কারুকার্যপূর্ণ চমৎকার কোনো সৃষ্টিকর্মকে বোঝায়। মূলত এঁটেল মাটি কাদামাটির সাহায্যে শৈল্পিক রূপ দিয়ে তৈরী করে আগুড়ে পুড়িয়ে মৃৎশিল্প আকার লাভ করে।

বাঙালির কালজয়ী ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে আছে আমাদের এই মৃৎশিল্প। বহুদিন ধরে হিন্দু পালরা(যাদেরকে আমাদের দেশে কুমোর বলা হয়) এই শিল্প টিকিয়ে রাখতে আবদান রেখে আসছে, তবে এখনকার সময়ে মুসলামানরাও এক্ষেত্রে ভুমিকা রাখছে। এখনো বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলাতে মৃৎশিল্প তৈরী হচ্ছে, যেমনকুমিলার বিজয়পুরে মৃৎশিল্প সমিতি আছে। সেখানে বহুমানুষ প্রতিনিয়ত কাজ করছে এবং অত্যন্ত চমৎকার বিচিত্র সব শিল্পকর্ম তৈরী করছে, যা দেশের গন্ডিও পেরিয়ে গেছে। সেখানকার শিল্পকর্ম দর্শককেও অত্যন্ত মুগ্ধ আকৃষ্ট করে।

আবার, শরিয়তপুর জেলার কার্তিকপুরের মৃৎশিল্প দেশের গন্ডি পেরিয়ে ইউরোপ, আমেরিকা অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে, যা বহির্বিশ্বে আমাদের দেশের ঐতিহ্যকেও বহন করছে আবার বৈদেশিক মুদ্রাও পাওয়া যাচ্ছে। এটি অবশ্যই আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। অন্যদিকে, পটুয়াখালী জেলার বাউফলের মৃৎশিল্পেরও সুনাম রয়েছে। তথ্যমতে, একবছর আগে বিশ্বজুড়ে অর্ধশতকোটি টাকার বাজার গড়েছে বাউফলের মৃৎশিল্প। এই তিনজেলা ছাড়াও সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল মাদারীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় কমবেশি মৃৎশিল্প তৈরী হয়।

কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, বাংলাদেশে এই শিল্পের অস্তিত্ব যেন হারাতে বসেছে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এর জায়গায় স্থান করে নিয়েছে প্লাস্টিক আর অ্যালুমিনিয়াম। অতীতে আমাদের দেশে শুধু জেলাতেই নয়, প্রত্যেক উপজেলাতেও মৃৎশিল্প তৈরী বেচাকেনা হতো। কিন্তু গত এক দশকে এর ব্যবহার আগের তুলনায় অনেক লোপ পেয়েছে। সাধারণ মানুষও এখন মৃৎশিল্প দেখতে পছন্দ করলেও ব্যবহারের জন্য প্লাস্টিক আর অ্যালুমিনিয়ামের জিনিসই কিনে। এর ফলে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর প্লাস্টিকের ব্যবহার যেমন দিনকে দিন বাড়ছে, তেমনি মৃৎশিল্পের ব্যবহার যেন হারাতে বসেছে।

বেচাকেনা কম হওয়ার ফলে এর কারিগরেরাও বানাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে না, কারণ মৃৎশিল্পের দামও অনেক কমে গেছে, ফলে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারছে না। এজন্য অন্যপেশার দিকে ছুটছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আগামী এক দশকের মধ্যেই হয়তো সম্পূর্ণ হারিয়ে যাবে। কিন্তু এই শিল্প বাঁচিয়ে রাখলে একদিকে আমাদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে এবং বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রাও আসবে আবার প্লাস্টিকের ব্যবহারও কমবে। আমরা প্লাস্টিকের ব্যবহার রোধ করতে চাই, কারণ এটি পরিবেশ দূষিত করে এবং জলাবদ্ধতা সৃষ্টির জন্যও দায়ী। কিন্তু এর বিকল্পটা খুঁজে না পেলে হয়তো এটির ব্যবহার কমবে না।

মৃৎশিল্পই হতে পারে প্লাস্টিকের সর্বোত্তম বিকল্প। আমাদেরকে এই শিল্পের বহুবিধ গুণগুণ সম্পর্কে ভালোভাবে জানা দরকার প্লাস্টিকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কেও অবহিত হওয়া দরকার। তাহলে আমরা মাটির তৈরী জিনিস ব্যবহার করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবো। যেমনমাটির তৈরী কলসে পানি রাখলে সেই পানি একদিকে যেমন ঠান্ডা থাকে, তেমনি স্বাস্থ্যগত দিক থেকে এর উপকারিতা রয়েছে। আবার, গ্যাসের চুলার থেকে মাটির চুলায় রান্না করলে সেই খাবার খেতে অধিক সুস্বাদু হয় এবং স্বাস্থ্যের জন্যও অধিকতর উত্তম। আমরা গাছ লাগানোর জন্যও ইদানিং অনেকে প্লাস্টিকের টব কিনছি; কিন্তু এর বদলে যদি মাটির তৈরী টব ব্যবহার করি, তবে সেটি গাছের জন্যও বেশি উপকারি। মৃৎশিল্পের এমন বহু সুবিধাজনক চমৎকার দিক রয়েছে। আমাদের সেটি ভালোভাবে জানা উচিত এবং প্লাস্টিকের বদলে এগুলো ব্যবহারের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত।

যাইহোক, মৃৎশিল্পের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে আমাদেরকে চেষ্টা করতে হবে। এটাকে আমাদের একটা ব্রান্ড হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং একইসাথে জিআই পণ্যের স্বীকৃতি আদায়ের জন্য তালিকাভুক্ত করা উচিত। মৃৎশিল্প টিকিয়ে রাখতে যাতে সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা যাতে করা হয়, সেজন্য সরকারের কাছে আহŸান জানাই। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যাতে প্রত্যেক জেলায়  মৃৎশিল্প উদ্যোক্তা কারিগরদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিকনির্দেশনা দিয়ে পাশে থাকা দরকার। একইসাথে মৃৎশিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টদের সামাজিকভাবে স্বীকৃতি গুরুত্ব দিতে হবে। প্রত্যেক উপকরণের ন্যায্য বাজারদর নির্ধারণের মাধ্যমে মৃৎশিল্প টিকিয়ে রাখতে হবে। অন্যথায়, এর দাম একেবারে কম হলে কেউ এই পেশায় থাকবে না। আবার, এখানে কোনো সিন্ডিকেট করে কারিগরদের বা শ্রমিকদের ঠকানো হচ্ছে কিনা সেটাও দেখা গুরুত্বপূর্ণ।

সর্বোপরি বলবো, মৃৎশিল্প আমাদের বাংলা বাঙালির আবহমান ঐতিহ্য আমাদের গর্ব। এটি আমাদের বাঙালির মাটি মানুষের অস্তিত্বের সাথে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে। আমরা সকলে যাতে এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে সচেতন হই গুরুত্ব প্রদান করি। এজন্য সরকার সাধারণ জনগণ উভয়ের পক্ষ থেকেই সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা চালানো আবশ্যক।

শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়



[ad_2]

Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত