Homeজাতীয়পদ্মা-যমুনায় ড্রেজিংয়ের নামে অর্থ লোপাট  

পদ্মা-যমুনায় ড্রেজিংয়ের নামে অর্থ লোপাট  

[ad_1]

স্পর্শকাতর আরিচা-কাজিরহাট নৌ-পথে ফেরি চলাচলের নিদৃষ্ট চ্যানেলে নাব্যতা সঙ্কট দুরকরণে টানা তিন মাস যাবৎ ড্রেজিং কার্যক্রম চললেও তেমন কোন উন্নতি হচ্ছে না। ক্রমেই এ নৌপথ নাব্যতা হারিয়ে সুরু হয়ে আসছে। এতে করে এরুটে ফেরিসহ ভারী নৌযান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। ভরা বর্ষা মওসুম থেকেই এ রুটে ড্রেজিং কার্যক্রম চললেও আরিচা-কাজীরহাট-বাঘাবাড়ী ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটে চলাচলরত ফেরীগুলো মাঝে মধ্যেই সৃষ্ট ডুবোচরে আটকে যাচ্ছে। গত তিন মাসে কয়টি ড্রেজার দিয়ে কতটুকু মাটি বা পলি অপসারিত হয়েছে তারও কোন সঠিক হিসাব সংবাদকর্মীদের জানাচ্ছেন না ড্রেজিং বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় ‘সরকার কা-মাল দরিয়া মে ঢাল’ এর কারণ হিসেবে স্থানীয়রা বলছেন- নদী থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে অপসারিত পলি নদীতেই ফেলা হচ্ছে। 

খোঁজ নিয়ে জানাযায়, প্রায় তিন মাস যাবৎ উল্লেখিত নৌ-চ্যানেল খনন করছে বিআইডবিøউটিএ’র ড্রেজিং বিভাগের বেশ কয়েকটি ড্রেজার। তবুও এ নৌপথের মূল চ্যানেলে নাব্যতা ফিরেনি। অথচ এ কাজে সরকারের কোটি-কোটি টাকা ব্যয় ধরা হচ্ছে। এসব বিষয়ে কথা বলতে চাইলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কোন কর্মকর্তাই কথা বলছেন না। মাটি কাটা ও নদীর পলি নদীতেই ফেলার এমন অদ্ভুত দৃশ্য দেখে অনেকেই বিস্মৃত। ড্রেজার সংশ্লিষ্টরা পরিকল্পিত ভাবে খননকৃত নদীর বালু নদীর উজানে ফেলছেন। উজানে ফেলা পলি ¯্রােতের টানে পুনরায় সাবেক স্থলে এসে লেপটে পড়ছে। এতে ড্রেজিং কার্যক্রমে ধীরগতি ও সরকারের কোটি-কোটি টাকা গচ্ছা যাচ্ছে বলে মন্তব্য করছেন এরুটে চলাচলকারী ফেরিসহ বিভিন্ন নৌযানের চালক ও শ্রমিকরা। তারা জানান, ড্রেজিং কার্যক্রম চলমান থাকলেও অতিসম্প্রতি এরুটে ফেরি চলাচল টানা ৩৬ ঘন্টা বন্ধ থাকায় রাজস্ব হারায় ফেরি কর্তৃপক্ষ। এ নৌ পথে রাজধানী ঢাকার সাথে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা হয়ে পড়ে বিচ্ছিন্ন । চলমান পরিস্থিতিতেও  এরুটের কোন একটি ফেরি ফুল লোড নিয়ে চলাচল করতে পারছে না। এতে উভয় ঘাট এলাকায় যানজট স্থায়ী রুপ নিয়েছে।

ফেরি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, স্বাভাবিকভাবে ফেরি চলাচলের জন্য চ্যানেলে ৯/১০ ফুট পানির গভীরতার প্রয়োজন। সেখানে পানির গভীরতা রয়েছে মাত্র ৭/৮ ফুট। চ্যানেলের প্রস্থতাও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।  সুরু এ নৌ-চ্যানেলের ২০০মিটার এলাকা জুরে রয়েছে অসংখ্য ডুবোচর। ফলে ফেরিগুলো হাফ লোডে চললেও ডুবো চরে ধাক্কা খেয়ে তা খুড়িয়ে চলায় ফেরির প্রপেলারের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। রয়েছে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংকা । 

বিআইডবিøউটিএ’র ড্রেজিং ইউনিটের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান আহমেদ জানান, আরিচা-কাজিরহাট-বাঘাবাড়ী নৌ পথের স্পর্শকাতর পয়েন্ট গুলোতে চলতি বছরের ২৮ জুলাই ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-পথে ২৪ অক্টোবর হতে নাব্যতা ঠিক রাখতে ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে নদীর তলদেশে ¯্রােতের বেগ থাকায় ড্রেজিংয়ের দীর্ঘ মেয়াদী সফল মিলছে না। ড্রেজিং চলমান থাকায় চলতি নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে এর সুফল মিলবে। নদীর নাব্যতা ও ফেরি চলাচলে চ্যানেল স্বাভাবিক রাখতে এভাবেই ড্রেজিং কার্যক্রম চালাতে হবে। যার অন্য কোন বিকল্প নেই। চলতি বছরের ২৮ জুলাই থেকে এ যাবৎ কত ঘন ফুট পলি অপসারণ এবং এ কাজে কত টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে এমন প্রশ্নের কোন সদোত্তর মিলেনি তার কাছে।  

ড্রেজিং ইউনিটের চিফ-ইঞ্জিনিয়র রাকিবুল ইসলাম জানান, উল্লেখিত নৌপথ সচল রাখতে সংস্থার নিজস্ব ড্রেজার কাজ করছে। আরিচা বেইজে ১৬টি ড্রেজার যুক্ত রয়েছে। যা আগামীতে ২০টিতে উন্ন করা হবে। এর মধ্যে ৯টি ড্রেজার খনন কাজে নিয়োজিত রয়েছে। গত বছর একাজে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৩ কোটি ৭ লাখ টাকা। এবারও ৪১ লাখ ঘনমিটার পলি অপসারনের পরিকল্পনা রয়েছে। এ জন্য প্রয়োজন ২০ লাখ লিটার তেল। যা সরাসরি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) সরবরাহ করবে। এতে কত ব্যয় হবে জানতে চাইলে তিনি জানান, যে হেতু সংস্থার নিজস্ব ড্রেজার কাজ করবে সেহেতু মূল খরচ হবে জ্বালানীতে।  

 

এ বিষয়ে বিপিসি’র কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, ডিপোতে বর্তমানে  ডিজেলের রেট প্রতি লিটারে একশ ১ টাকা ২২পয়সা। সে হিসাব মতে ২০ লাখ লিটারের তেলের দাম ২০ কোটি ২৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এর সাথে যুক্ত হবে মেইনটেন্স খরচ। দেখা যাচ্ছে এ নৌ-পথটি যেন সরকারের টাকা খরচ বা সংশ্লিষ্টদের লুটপাটের মহা আস্তানা। অনেকেই বলেছেন  সংস্থার ড্রেজিং ইউনিটে কর্মরত প্রায় সকলেই কোটিপতি।


জানা গেছে, ২৬ ইঞ্চি ২০ ইঞ্চি ও ১৮ ইঞ্চি ব্যাসের কাটার দিয়ে ড্রেজিং কার্যক্রম চলমান রয়েছে।  একেকটি ড্রেজার যথাক্রমে প্রতি ঘন্টায় ৫০০, ৩৫০ ও ৩০০ ঘনফুট মাটি কাটতে সক্ষম। প্রতিটি ড্রেজার স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ১০ ঘন্টা কাজ চলে। এ হিসেবে ৬৭ দিনে ১৩ লাখ ঘনমিটার পলি অপসারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ বিগত প্রায় ২ মাসে লক্ষ মাত্রার তিন ভাগের এক ভাগের কিছুটা কম  পলি অপসারন হয়েছে। লক্ষ মাত্রায় পৌছাতে আরো ৪ মাস লাগবে। 


নাম-পদবী প্রকাশে অনিচ্ছুক ড্রেজিং ইউনিটের এক কর্মকর্তা জানান, আরিচা ঘাটের কাছে যমুনায় যে পরিমান পলি অপসারণ হয়েছে তা যদি নদী তীরে ফেলা হতো তীরবর্তী এলাকায় একটি সুন্দর বাঁধ নির্মাণ হতো। অথচ, ড্রেজিংকৃত পলি নদীর উজানে ফেলায় স্রোতের টানে তা পুনরায় নৌ-চ্যানেল ভরাট হচ্ছে। দীর্ঘদিন যাবৎ আরিচা বেইজের যমুনা ও পদ্মায় এমনটাই দেখা যাচ্ছে। এতে পানিতেই গচ্ছা যাচ্ছে সরকারের অগনীত টাকা। 

তবে বিআইডবিøটিএ’র চেয়ারম্যান আরিফ আহমেদ মোস্তফা জনকন্ঠকে বলেছেন ভিন্ন কথা। তার ভাষ্যমতে নদী থেকে ড্রেজিংকৃত মাটি কখনই নদীতে ফেলা হয় না। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সিইআইজিএস কর্তৃক নির্দেশিত চরে তা প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। এ বিষয়ে সিইআইজিএস কর্তৃপক্ষ বলছেন, এসব বিষয়ে ফাইল না দেখে কিছুই মন্তব্য করা যাবে না।



[ad_2]

Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত