[ad_1]
জাতীয় পর্যায়ে ফয়সালা হলেই আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী দলগুলোর নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে বলে জানিয়েছেন নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ প্রশ্নে ফয়সালার বিষয়ে আমরাও অপেক্ষা করছি। ফয়সালাটা কী আসে দেখি। জাতীয় পর্যায়ে একটা ফয়সালা হোক। তাহলে সেভাবে আমরা ব্যবস্থা নেবো।’
রবিবার (২৪ নভেম্বর) শপথ গ্রহণের পর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় অন্য চার কমিশনার উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগের নির্বাচন অংশগ্রহণ নিয়ে ভাবনা প্রশ্নে সিইসি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ, ওটা নিয়ে তো সিরিয়াস বিতর্ক আছে। বাইরে চলছে। এই বিতর্কের ফয়সালা হোক। ভোট তো আরও দেরি আছে। কাল-পরশু তো ভোট হচ্ছে না। আওয়ামী লীগের বিষয়ে, ফয়সালার বিষয়ে আমরাও অপেক্ষা করছি। ফয়সালাটা কী আসে দেখি। তাহলে সেভাবে আমরা ব্যবস্থা নেবো। এই মুহূর্তে বিগত সরকারি দল ও সহযোগীদের নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। জাতীয় পর্যায়ে একটা ফয়সালা হোক। তাহলে ইনশাআল্লাহ, সময় আসলে আপনারাও দেখতে পাবেন।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের কোনও নিজস্ব এজেন্ডা নেই। কাজেই আমাদের ওপর কোনও চাপ নেই। এটা আমাদের জন্য বড় সুযোগ। আর রাজনৈতিক দলগুলো ১৫ বছর ধরে বলছে তারা জনগণের ভোটের অধিকার চায়। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। তারা এই যুদ্ধ ১৫ বছর ধরে করছে। তারা তো জাতির কাছে ওয়াদাবদ্ধ। আমরা তাদের বলবো—আমরা আপনাদের এই কাজটি করে দিতে চাই। তারা তো না করতে পারবে না।’
মতবিনিময়ের শুরুতে সিইসি বলেন, ‘এই প্রথম খুবই স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় আমাদের নিয়োগ হয়েছে। গোপনীয়তা রক্ষা করে নিয়োগ হয়েছে। আদেশ হওয়ার আগ পর্যন্ত আমি জানতাম না এই দায়িত্বটা আমার ঘাড়ে এসে পড়েছে। টিভিতে দেখে প্রথম জানতে পারি।’
জাতি একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। কেউ কেউ এটাকে দ্বিতীয় বিপ্লবও বলে থাকেন। এই ক্রান্তিকালে এই গুরুদায়িত্বটা ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। আমি টিম মেম্বারদের বিষয়ে যতটা জানতে পেরেছি—তাতে একটি সলিড টিম নিয়ে কাজ করতে পারবো।’
তিনি বলেন, ‘আমরা নিজেদের মধ্যে পরিচয় পর্বটা সেরেছি। কীভাবে সামনের দিকে এগোবো তার একটি প্রাথমিক ধারণাও পেয়েছি। টিম মেম্বারদের লেভেল অব কনফিডেন্ট ভেরি হাই। যে দায়িত্ব আমাদের ওপর পড়েছে তা পালনে ইনশাআল্লাহ সচেষ্ট থাকবো। জাতির প্রত্যাশা পূরণের জন্য আমরা নিজেদের নিয়োজিত রাখবো।’
নাসির উদ্দীন বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি, জাতির প্রতি যে ওয়াদা—অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সর্বশক্তি নিযুক্ত করবো। নির্বাচনের জন্য যা যা দরকার, তার সবই করা হবে।’
নিজের কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সিইসি বলেন, ‘আমার জীবনে কোনও ব্যর্থতা নেই। আমি কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছি। অনেক কঠিন কাজ করতে হয়েছে। ব্যর্থ হইনি। ইসির দৃশ্যমান যে চ্যালেঞ্জ রয়েছে—এই বাইরে আরও বহুবিধ চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেটা আমরাও জানি না। নিত্যনতুন অনেক চ্যালেঞ্জ আসবে। এই চ্যালেঞ্জগুলো আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এজন্য গণমাধ্যমের সহযোগিতা চাই।’
খাস নিয়তে কাজ করতেছি
সিইসি বলেন, ‘মানুষ এখন ভোটের নাম শুনলে নাক সিটকায়। প্রশ্ন তোলে ভোট দিলে কী হবে? কেউ কেউ বলেন, ভোট রাতে হয়ে গেছে। স্যরি টু সে, কেউ কেউ বলবেন কুত্তা মার্কা নির্বাচন। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে, মানুষকে আগ্রহী করে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসা, নষ্ট আগ্রহ নতুন করে পুনরুজ্জীবিত করতে মিডিয়ার সহযোগিতা লাগবে। আমরা খাস নিয়তে কাজ করতেছি—এটাও জানানো আপনাদের দায়িত্ব। আমরা যে ওয়াদা দিচ্ছি সেই পথে আছি কিনা সেটা আপনারা ফলো করবেন। খারাপ কাজ আগে যেগুলো হয়েছে, তা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবো। মানুষ হিসেবে ভুল হতে পারে, তবে জেনে-বুঝে কোনও ভুল করবো না।’
অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন চ্যালেঞ্জ
৭২ বছর বয়সী সিইসি নাসির উদ্দীন বলেন, ‘আমরা সকলেই বয়স্ক হলেও মানসিক দিক থেকে ইয়ং আছি। মানসিকভাবে বুড়ো হইনি। আমাদের বৃদ্ধ মনে করবার কোনও কারণ নেই।’
এই মুহূর্তে ইসির বড় চ্যালেঞ্জ কী জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘আমাদের চ্যালেঞ্জ একটা। তা হলো জাতিকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়া। এটাকেই আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। এটাই আমরা মোকাবিলা করতে চাই।’
একতরফা নির্বাচনের কারণে দেশের ১২টা বেজে গেছে
এক প্রশ্নের জবাবে নবনিযুক্ত সিইসি বলেন, ‘আমাদের সব প্রচেষ্টা নিবেদিত থাকবে একটা পরিবেশ সৃষ্টির জন্য, যে পরিবেশে সব ভোটার নিজের ইচ্ছায় পছন্দের প্রার্থীকে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে, সেই পরিবেশ নিশ্চিত করা। এটার জন্য যা করণীয় তা করা হবে। আমরা একতরফা নির্বাচনে বিশ্বাস করি না। বুঝতেই তো পারছেন একতরফা নির্বাচনের কারণে দেশের ১২টা বেজে গেছে। গায়ের জোরে ইলেকশন করতে যাওয়ায় সেটাই তো হয়েছে। আমরা কোনও গায়ের জোরের নির্বাচন দেখতে চাই না। কোনও একতরফা নির্বাচন আমরা দেখতে চাই না। আমরা প্রতিযোগিতামূলক… লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে দেবো। যাতে নিয়মের মধ্যে সবাই খেলতে পারে।’
সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে চাই
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আপনাদের বিবেচনায় শতভাগ নিরপেক্ষ নির্বাচন নাও হতে পারে। কিন্তু আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে শতভাগ। আগে ডামি নির্বাচন হয়েছে। ১৫৩ জন বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছে। আমাদের আগমন এগুলো মোকাবিলা করার জন্যই। আমরা দায়িত্বটাকে বড় সুযোগ হিসেবে নিতে চাই। শেষ সময়ে এসে জাতির জন্য কিছু একটা করার সুযোগ পেয়েছি। এই সুযোগের সদ্ব্যবহার আমরা করতে চাই। আমরা যদি এখানে ফেল করি, তাহলে দেশের ভোটের অবস্থা কী হবে, সেটা বুঝতেই পারছেন।’
সরকারের তরফ থেকে কোনও চাপ নেই
সরকার থেকে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হলে কতটা স্বাধীন থাকতে পারবেন? আপনারা কী সরকারের প্রভাবমুক্ত থাকতে পারবেন? এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, ‘আপনাদের একটা বিষয় জানাতে পারি, এই সরকার সেই সরকার নয়। আগের সরকার চাপ দিয়েছে, কারণ তাদের দলীয় এজেন্ডা ছিল। নিজেদের এজেন্ডা ছিল। এই সরকারের তো কোনও এজেন্ডা নেই। প্রফেসর ইউনূস বিভিন্ন সময়ে তার অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। ওনার কোনও রাজনৈতিক অভিলাষ নেই। উনি একটি ফ্রি, ফেয়ার, ক্রেডিবল ইলেকশন দিয়ে রাজনীতিবিদদের হাতে ক্ষমতা দিয়ে বিদায় হতে চান। উনি বলেছেন, উনি মুক্তি পেতে চান। কাজেই সরকারের তরফ থেকে কোনও চাপ নেই। অতীতে চাপ তো ছিলই। ওটাই ছিল সব থেকে বড় চাপ। আমাদের ওপর সরকারের তরফ থেকে কোনও চাপ নেই। আমাদের ফ্রিডম দেওয়া আছে। আমরা আমাদের কলিগদের ও জনগণকে নিয়ে যা করার করবো। আই অ্যাম কনভিন্স কোনও চাপ থাকবে না।’
নির্বাচন সংশ্লিষ্ট জরুরি সংস্কারের পরে নির্বাচন
নির্বাচন কবে হবে, জানতে চাইল তিনি বলেন, ‘আজকেই মাত্র দায়িত্ব নিলাম। নির্বাচন কবে হবে তা দিনক্ষণ দিয়ে বলতে পারবো না। তবে, যেকোনও নির্বাচন করতে হলে কিছু প্রস্তুতিমূলক কাজ থাকে। এখন তো আরও বেশি। কিছু সংস্কার তো দরকার হয়। ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সংস্কার তো চলতেই থাকবে। তবে কিছু জরুরি সংস্কার তো করতেই হবে। যেমন- তরুণ সমাজকে ভোটাধিকার দিতে হলে ভোটার করতে হবে। এটাও তো একটা কাজ। শুনতে পাই ফেক ভোটার আছে অনেক। অনেকে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের অনেক ভোটার হয়ে গেছে। এই চেয়ারে বসার আগে অনেক তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করেছি। একেক জন একেক রকম তথ্য দেয়। মিডিয়াতে দেখছি, কেউ বলছেন আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের কথা। কেউ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সরকারের কথা বলছেন। এরকম কিছু হলে তো আমাদের সেভাবে ভোটের ব্যবস্থা করতে হবে। কাজেই এই বিষয় নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। এগুলো ফয়সালা না হলে আমরা কীভাবে ভোট করবো? সুবিধা হচ্ছে সরকার অনেক সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। নির্বাচনের জন্য সেসব কমিশন সংশ্লিষ্ট সুপারিশগুলো গ্রহণের পর, নির্বাচন করার মতো সবকিছু যখন প্রস্তুত হবে—তখনই আমরা নির্বাচনের তারিখ দেওয়ার বিষয়ে চিন্তা করতে পারবো। এই মুহূর্তে বলে দিলাম এক বছর পরে হবে, কিন্তু এক বছর পর দেখা গেলো এককক্ষবিশিষ্ট হবে না দ্বিকক্ষবিশিষ্ট হবে, এই ফয়সালাই হয়নি। কাজেই সব কিছু একটি আরেকটির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। সরকার তো সংস্কার কমিশনগুলোর সময়ও বেঁধে দিয়েছে। কাজেই অধৈর্য হওয়ার তো কিছু নেই। আমরা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য সংস্কারগুলো নিয়ে কাজে নেমে পড়বো। আজ থেকেই আমাদের পক্ষ থেকে যথাসম্ভব নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেবো। কিন্তু সংস্কারগুলো না এলে তো পারবো না।’ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট জরুরি সংস্কারের পরে নির্বাচন হবে বলে জানান তিনি।
[ad_2]
Source link