[ad_1]
জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে অনেকটা আকস্মিকভাবেই প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়। বাংলাদেশ সরকারের অর্থসচিব খন্দকার আসাদুজ্জামান আমাকে তাঁর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। মাত্র পাঁচ মিনিটের ছোট্ট আলাপচারিতায় আমি উপলব্ধি করি যে তাজউদ্দীন অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও বিচক্ষণ ব্যক্তিত্ব। তাঁর সামনে যে কঠিন দায়িত্ব, সে বিষয়ে তাঁর মনে কোনোই অস্পষ্টতা নেই। একইভাবে তিনি জানেন যে যুদ্ধে সহজে জয়লাভ করার কোনো উপায়ই নেই। তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমি খুবই আনন্দিত হলাম। কাপ্তাই থেকে পালিয়ে আসার পর আবার উপলব্ধি করলাম, মুক্তিসংগ্রামে আমিও সম্পৃক্ত হয়েছি।
এর কয়েক দিন পর একটা কথা আমার কানে এল। আমি নাকি প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব হতে যাচ্ছি! আমার জন্য এ কথা বিশ্বাস করা কঠিন ছিল। এ ধরনের কাজে আমি কখনোই সম্পৃক্ত ছিলাম না। তা ছাড়া প্রশাসন ক্যাডারের অভিজ্ঞ অনেক লোকই ছিলেন। সে ক্ষেত্রে আমাকে এই কাজের জন্য বিবেচনা করা নিতান্ত বেমানান। অন্তত খুবই বিরল ব্যাপার।
…
যেকোনো নির্বাসিত বা প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রীকে অনেক সমস্যা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। তাজউদ্দীন সাহেবকে বোধ হয় তার চেয়ে বেশি সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হওয়ায় পুরো যুদ্ধ সংগঠিত করা ও নেতৃত্ব দেওয়ার দায়দায়িত্ব তাঁর ওপর বর্তায়। প্রবাসের একটি শহর কলকাতায় বসে জনসমর্থন ব্যতীত অন্য কোনো সম্পদ ছাড়া দুই হাজার কিলোমিটার সীমান্তজুড়ে তাঁকে গেরিলাযুদ্ধ সংগঠিত করতে হচ্ছিল। আর এমন এক বাহিনীর বিরুদ্ধে এ যুদ্ধ করতে হচ্ছিল, যে বাহিনী অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত, প্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ। প্রথম দিকে তো পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধ ছিল অসম্ভব ব্যাপার। আর প্রতিটি পদক্ষেপে ভারত সরকারের সঙ্গে মতৈক্য ছিল অপরিহার্য। ভারতের দিক থেকেও বাংলাদেশের সমস্যাটি ছিল গুরুতর ও বহুমাত্রিক। ভারত নিজস্ব নিরাপত্তাঝুঁকির মধ্যে ছিল। আমেরিকা, চীন ও বেশির ভাগ মুসলিম রাষ্ট্র বাংলাদেশ বিষয়ে ভারতের বিপক্ষে অবস্থান নেয়।
[ad_2]
Source link