[ad_1]
জামদানির মতো ঐতিহ্যবাহী শাড়িকে ফিউশন করে অভিনেত্রী জয়া আহসান যেমন প্রশংসিত হয়েছেন। তেমনি সামলাতে হচ্ছে নিন্দার ঝড়ও। পাল্লা আপাতত কোন দিকে ভারি, সেটা মাপতে আরও সময় লাগবে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে হবে ইতিহাসের জন্য।
তার আগে জেনে নেওয়া যাক জামদানি নিয়ে জয়া আহসানের এই ফিউশনের পেছনের গল্প। প্রশ্ন থাকবে চলমান সমালোচনা প্রসঙ্গেও। জয়া মনে করেন, বাংলাদেশের জামদানি নিয়ে যত বেশি ফিউশন হবে ততোই বিশ্বে এর চাহিদা বাড়বে। আর চলমান সমালোচনাকে তিনি গায়েই মাখছেন না! বরং ভবিষ্যতে জামদানি নিয়ে আরও বেশি বেশি ফিউশন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন বাংলা ট্রিবিউন-এর সঙ্গে একান্ত আলাপে।
পাঠকদের মনে করিয়ে দেয়ার জন্য বলা, রবিবার (১ ডিসেম্বর) মুম্বাইতে অনুষ্ঠিত হয়েছে ফিল্মফেয়ার ওটিটি অ্যাওয়ার্ডসের পঞ্চম আসর। সিরিজ, সিনেমা ও সমালোচক- এই তিন ক্যাটাগরিতে ৩৯টি পুরস্কার প্রদান করা হয়। বলিউড ও টলিউডের তারকাদের পাশাপাশি অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে ছিলেন বাংলাদেশের অভিনেত্রী জয়া আহসান। অনুষ্ঠানে জামদানি শাড়ি বিশেষ ঢঙে পরে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন এই গুণী অভিনেত্রী। সেখানে ভেসেছেন প্রশংসার বন্যায়। জয়া নিজেই জানিয়েছেন, সেদিন কতটা প্রশংসা করেছেন সবাই। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘সেদিন (১ ডিসেম্বর) আমি যখন মঞ্চের পেছনে বসে ছিলাম, সবাই আমাকে দেখে প্রশংসা করেছে। ‘কাড়াক সিং’-এর সহকর্মীরা আলাদা আলাদা করে আমার হাত, চুল, গয়নার ছবি তুলছিলো। এমনকি ‘হীরামান্ডি’র একজন অভিনেত্রীও পুরস্কার দেওয়ার জন্য অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। তিনিও বলেছিলেন, ‘তোমার জামদানিটা এত সুন্দর। আমি কি এটা একটু ছুঁয়ে দেখতে পারি?’ উনি জামদানির টেকচার ছুঁয়ে দেখছিলেন। আমার কাঁথার জ্যাকেটটা ধরে দেখছিলেন। এসবই তো আসলে ভালোলাগার বিষয়।’’
কিন্তু জামদানি শাড়ি দিয়ে এমন ফিউশন পরিকল্পনা মাথায় এলো কখন কিভাবে? অকপট অভিনেত্রী, ‘অস্কার বা বড় কোনও আয়োজনে সবাই যেমন কাপড় পরে আমি তার চেয়ে ভিন্নকিছু পরতে চেয়েছিলাম। সবাই কালো নয়তো সাদা বা এমন কোনও রঙ পরে কিন্তু আমাদের দেশের রঙ তো ভীষণ কালারফুল। আমি দেশীয় কিছুই পরতে চেয়েছিলাম এবং সেটা অবশ্যই কালারফুল। সেক্ষেত্রে জামদানির চেয়ে তো আর ভালো কিছু হয় না। আমি জামদানির ফিউশনে খুবই সাড়া পেয়েছি, বিশেষকরে বোম্বেতে। সবাই খুবই প্রশংসা করেছিলো।’
সময় কম থাকায় পোশাক নিয়ে বেশি নিরীক্ষা করতে চাননি জয়া। তিনি বলেন, ‘শাড়িটা থ্রেড থেকে উপহার পেয়েছিলাম। এত অল্প সময়ে কীভাবে ফিউশন করা যায় ভাবছিলাম। তখন আমি কাঁথা ফোড়ের একটা জ্যাকেট দিয়ে পেয়ার আপ করলাম। এই কম্বিনেশনটা তৈরি করেছেন ঋষভ নামে একজন ভিজ্যুয়াল আর্টিস্ট।’
অভিনেত্রী জানিয়েছেন, তিনি ইচ্ছে করেই এমন ফিউশন বেছে নিয়েছিলেন। জয়ার জামদানি ফিউশন যেমন অনেক প্রশংসা পেয়েছে, দেখা গেছে এর বিপরীত চিত্রও। অনেকেই জামদানির এমন উপস্থাপনা পছন্দ করেননি। যেটি নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলছে। অনেকেই বলছে, জামদানির ১২টা বাজিয়েছেন জয়া! সেটাও কানে গেছে জয়ার। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ আমি দেখেছি অনেকে এটা নিয়ে কথা বলছেন। আমরা আমাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার যদি ফিউশন করে খেতে পারি, যেমন পিঠা বা মাছ তো আমরা ফিউশন করে খাই। তাহলে আমাদের দেশের কস্টিউম কেন ফিউশন করে পরতে পারবো না? কেউ তো দাসখত দেয়নি যে, জামদানি এভাবে পরা যাবে না, ওভাবে পরা যাবে না। জামদানি যদি স্কার্ট হয়, জ্যাকেট হয় তাহলে এভাবে পরলে সমস্যা কোথায়। আমরা যত ফিউশন করবো ততো বাইরের দেশের কাছে উপস্থাপন করতে পারবো। এটার চাহিদা অনেক বেড়ে যাবে। এসব ভেবেই আমি জামদানির এই ফিউশন করেছি। দেখুন, কয়েক বছর আগেও জামদানির এতটা চাহিদা ছিল না। কিন্তু এখন জামদানির এত চাহিদা যে, মনে হয় এটা শুধু একটি শাড়ি নয়, এটা অলঙ্কারের মতো। একটা মেয়ে চায়, তার ঘরে একটা সুন্দর, দামি জামদানি থাকুক।’
অভিনেত্রী আরও বলেন, ‘এটাই প্রথম নয়, আমি যতটুকু পারি জামদানি, মসলিন পরার চেষ্টা করি। এই লুকটারও একটা বিষয় ছিল। পুরানে যেসব মেয়েরা যুদ্ধ করতো, তাদের যে লুক সেই লুকেই আমি সেজেছিলাম এবং সেটা ইচ্ছে করেই। এমনকি পরিচালক সুজয় ঘোষও আমার লুকের প্রশংসা করেছিলেন।’ তবে সমালোচনা হচ্ছে বলেই তিনি থেমে যাবেন তা নয় বরং জয়া ভবিষ্যতে জামদানি দিয়ে আরও ফিউশন করতে চান, পরতে চান, পরাতে চান অন্যদের। জয়া বলেন, ‘আমি মনে করি জামদানি, মসলিন এমনকি আমাদের গামছাকেও একবার ব্যবহার করে ঘরবন্দী করে না রেখে যত বেশি ফিউশন করে পরতে পারি, বিশ্বে ততোই এর চাহিদা বাড়বে। আমি চেষ্টা করবো জামদানি নিয়ে আরও চমৎকার ফিউশন কী করা যায়।’
বলা দরকার, ‘ফিল্মফেয়ার ওটিটি অ্যাওয়ার্ড ২০২৪’ আসরে সঞ্চালক যখন জয়াকে মঞ্চে ডাকছিলেন, বলছিলেন ‘ফাইন অ্যাকট্রেস অব বেঙ্গল’! তখন দর্শক সারিতে ছিলেন কারিনা কাপুর, অভিষেক বচ্চন, বিজয় ভার্মা, মনীষা কৈরালা, সোনাক্ষী সিনহাসহ অনেকেই। আপাতত মুক্তির অপেক্ষায় আছে জয়া অভিনীত টলিউডের সাইকোলজিক্যাল ড্রামা ‘ওসিডি’। অভিনয়ের পাশাপাশি জয়া নিজেই প্রযোজনা করেছেন ছবিটি। এছাড়াও মুক্তির মিছিলে আছে ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’, ‘কালান্তর’, ‘নকশীকাঁথার জমিন’ প্রভৃতি।
[ad_2]
Source link