Homeজাতীয়টিকার চেয়ে মশা মারা জরুরি

টিকার চেয়ে মশা মারা জরুরি

[ad_1]

শীতের অনুভূতি হচ্ছে পুরো দেশেই। কিন্তু তবুও কমছে না ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বরং অন্যান্য মাসের তুলনায় ডিসেম্বরের প্রথম পাঁচ দিনেই মারা গেছেন বেশি। মাত্র পাঁচ দিনে রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৬ জন। এই সময়ে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন তিন হাজার ৪১৫ জন। এমন পরিস্থিতিতে সারা বছরের রোগ হিসেবেই ডেঙ্গুকে বিবেচনা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই এটি প্রতিরোধে টিকা আমদানির কথাও বলছেন অনেকে। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতায় এই টিকা এখনই আনা সম্ভব নয় বা প্রদান সম্ভব নয় জানিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, এই টিকা আমদানির চেয়ে মশা মারা কার্যক্রম কম ব্যয়বহুল। তাই মশা মারতেই জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে বিদেশ থেকে উচ্চ ক্ষমতার মশা মারার ওষুধ আমদানিরও তাগিদ তাদের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ডিসেম্বরের ১ তারিখেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ছয়জন। এ সময় নতুন করে আক্রান্ত হন ৮৮২ জন। মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৯২ হাজার ৩৫১ জন। ধারাবাহিকতা বজায় থাকে পরের দিনগুলোতেও। ২ তারিখ মারা যায় তিনজন, ৩ তারিখ সাতজন, ৪ তারিখ মৃত্যু হয় পাঁচজনের, ৫ তারিখও মারা যায় পাঁচজন। এতে করে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়ায় পাঁচশ’র ঘর। চলতি বছরের শুরু থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ৫১৪ জনের। আর মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৪ হাজার ৮৮৪ জন। এমন পরিস্থিতিতে সম্প্রতি এক আলোচনায় সভায় বেসরকারি হাসপাতালের মালিকরা ডেঙ্গু প্রতিরোধে টিকা আমদানির তাগিদ দেন। তাদের মতে, জাপানের তাকেদা ফার্মাসিউটিক্যালসের তৈরি টিকা ‘কিউডেঙ্গা’ ইতোমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পেয়েছে। যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইন্দোনেশিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশে এটির ব্যবহার হচ্ছে। তাই বাংলাদেশেও এটি প্রয়োগের কথা বলেন তারা। কিন্তু বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বাস্তবতায় এটি সম্ভব নয় উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর জনকণ্ঠকে বলেন, এটির এক একটি টিকার দাম প্রায় ৮৫ ডলার। প্রত্যেককে দুই ডোজ করে টিকা দিতে হবে। যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। শুধু তাই নয়, এটি প্রয়োগেরও নানান ক্রাইটেরিয়া রয়েছে। কেউ যদি একবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়, তাহলেই এটি শরীরে কাজ করবে। এতে করে প্রত্যেকটি মানুষকে ডেঙ্গু পরীক্ষার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। আমরা তো আর জানব না যে কেউ ডেঙ্গুতে কখনো আক্রান্ত হয়েছিল কি না। তাই এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া বলেই আমরা মনে করছি। তার চেয়ে যদি আমরা মশা নিধন কার্যক্রমে জোর দিতে পারি সেটি বরং সহজ হবে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করলেই যেহেতু এই রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়, তাই এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে যেন এডিস মশার প্রজনন না ঘটে। বা এর বিস্তার না ঘটে।

তবে দেশীয় প্রযুক্তি উদ্ভাবিত টিভি০০৫ টিকাটির তৃতীয় ধাপের ‘হিউম্যান ট্রায়াল’ সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর বলেন, এর চতুর্থ ধাপের সফল ট্রায়াল শেষে এ বিষয়ে চিন্তা করা যাবে। এক্ষেত্রে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন চাওয়া হবে। এতে করে আমাদের আমদানি জটিলতার মধ্য দিয়ে যেতে হবে না। আমরা আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র’ বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর’বি) এর সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা আমাদের এই টিকার অগ্রগতি জানাবেন। আমরা সেই মোতাবেক পদক্ষেপ নেব। তিনি বলেন, আমরা জানতে পেরেছি ইতোমধ্যে টিকার নিরাপত্তা এবং এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে পারে কী না সে বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। এই টিকার অন্যতম সুবিধা এটি কয়েক ডোজ নয় বরং এক ডোজ দিলেই কাজ করবে। এর মাত্র একটি ডোজই সব ধরনের ডেঙ্গুর (ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩, ডেন-৪) বিরুদ্ধে কার্যকর হবে। আলাদা আলাদা ডোজ নেওয়ার দরকার হবে না। শিশুসহ সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এমনকি ডেঙ্গু আক্রান্ত না হলেও এই টিকা নেওয়া যাবে। আর অন্য টিকার তুলনায় এটি সস্তা হবে বলেও জানিয়েছেন গবেষকরা। তাই আমরা এটি নিয়ে আশাবাদী।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, রাজধানীর দুই সিটির ৫৬টি ওয়ার্ডে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভার ঘনত্বের পরিমাণ নির্দিষ্ট মানদণ্ডের চেয়ে বেশি। এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের সূচক ‘ব্রুটো ইনডেক্স’ নামে পরিচিত। স্বীকৃত এই মানদণ্ডে লার্ভার ঘনত্ব ২০ শতাংশের বেশি হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে বলে মনে করা হয়।

জরিপে দেখা গেছে, রাজধানীর দুই সিটির ৯৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫৬টি ওয়ার্ডেই ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি। এর অর্থ হচ্ছে, এসব এলাকার ১০০টির মধ্যে ২০টির বেশি পাত্রে মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। এই এলাকাগুলো ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটির ঝুঁকিতে থাকা ওয়ার্ডগুলো হলো-৩৮, ৯, ৩০, ৭, ৮, ১৮, ২৫, ২৮, ৩৬, ৩৭, ১ এবং ১৯ নম্বর ওয়ার্ড। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটির ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলো হলো-৪৭, ৫৩, ৬১, ৫০, ২, ১৬, ২৬, ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড। আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন ডেঙ্গু রোগের বাহকের কীটতাত্ত্বিক জরিপের ফল উপস্থাপন করে জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের  মেয়াদ অনেক বেশি। অন্যান্য বছরে জুন-অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু বলবৎ থাকলেও এ বছর ডিসেম্বর মাস শুরু হলেও এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বিদ্যমান। এ প্রাদুর্ভাব মোকাবিলার লক্ষ্যে ঢাকার দুই সিটির মধ্যে একটি জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এই জরিপে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৭৫টি ভেতরে ৫৯টিতে এবং ঢাকা উত্তর সিটির ৫৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪০টি ওয়ার্ডে অর্থাৎ দুটি সিটির মোট ৯৯টি ওয়ার্ডের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্যাদি সংগ্রহ করা হয়। তিনি বলেন, এই জরিপে ঢাকা উত্তর সিটির চেয়ে আনুপাতিক হারে দক্ষিণ সিটিতে ডেঙ্গু সংক্রমণের হার বেশি। ঢাকাস্থ সব হাসপাতালেই ডেঙ্গু রোগীর চাপ রয়েছে। ঢাকা ছাড়াও অন্যান্য জেলারও অনেক ডেঙ্গু রোগী ঢাকাতে চিকিৎসা গ্রহণ করে। সে কারণে ঢাকাতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি পরিলক্ষিত হয়।

ডেঙ্গুর সাম্প্রতিক ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব সাইদুর রহমান বলেন, সচেতনতাই  ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের মূল মন্ত্র। আমরা সবাই জানি, কোথায় মশা উৎপত্তি হয়, কীভাবে ছড়ায়, কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিন্তু আমরা কেউ নিয়ম মানতে, সচেতন হতে রাজি নই। এটাই ডেঙ্গু বিস্তারে মূল সমস্যা। আমাদের অসচেতনতাই ডেঙ্গু মশা বিস্তারের মূল কারণ। আমরা একে অন্যকে দোষারোপ করি, কিন্তু মশার কামড় সবাই  ভোগ করি। কাউকে দোষারোপ না করে ডেঙ্গু মশা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, যার যার অবস্থান ও কর্মস্থল থেকে আমরা সবাই যথাসাধ্য চেষ্টা করি- তবেই এ মহামারি থেকে আমরা রক্ষা পেতে পারি।

প্রসঙ্গত, ডেঙ্গু প্রতিরোধে গত বছরের ২ অক্টোবর জাপানের তাকেদা ফার্মাসিউটিক্যালসের তৈরি টিকা ‘কিউডেঙ্গা’র অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পাওয়ার আগেই এই টিকা ব্যবহারের অনুমতি দেয় যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, থাইল্যান্ড ও আর্জেন্টিনা। দুই ডোজের এই টিকা শুধুমাত্র ৬ থেকে ১৬ বছর বয়সীদের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়। এর আগে সানোফি-অ্যাভেন্টিজের তৈরি  ডেঙ্গু টিকা ‘ডেঙ্গাভেস্কিয়া’রও অনুমোদন দেয় কয়েকটি দেশ। বাংলাদেশে আইসিডিডিআরবি’র সহায়তায় ‘টিভি০০৫’ নামে একটি ডেঙ্গু টিকার ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ। এই পরীক্ষার প্রথম দুই ধাপে তারা সফলতা পেয়েছে। তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা সফল হলে এর বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে বলে জানা গেছে।

এই টিকার চূড়ান্ত ফল পাওয়ার আগ পর্যন্ত ‘কিউডেঙ্গা’ আমদানি করে অন্তত: ৬ থেকে ১৬ বছর বয়সীদের ডেঙ্গুর সংক্রমণ থেকে বাঁচানো সম্ভব উল্লেখ করে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, ভাইরাসজনিত রোগগুলো প্রতিরোধে টিকার ব্যবহার ইতোমধ্যেই প্রমাণিত। যতদূর জানা গেছে, ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ধরনের বিরুদ্ধেই ‘কিউডেঙ্গা’ টিকা কার্যকরী। যেহেতু ডেঙ্গু আক্রান্তদের একটি বড় অংশ শিশু ও কিশোর, তাই এই টিকা ব্যবহার করে জনসংখ্যার একটি বড় অংশকে ডেঙ্গু থেকে নিরাপদ রাখা সম্ভব। তিনি বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সমন্বিত কোনো উদ্যোগ আমাদের চোখে পড়ছে না। সিটি করপোরেশন পর্যায়ে, জেলা পর্যায়ে বা ইউনিয়ন পর্যায়ে কীভাবে মশা নিধন করা হবে তা নিয়েও নেই কোনো গাইডলাইন। এমন পরিস্থিতিতে মশা যেহেতু নিধন করা যাচ্ছেই না সেহেত একটি প্রজন্মকে ডেঙ্গুর হাত থেকে বাঁচাতে টিকা আমদানির বিকল্প নেই বলে আমি মনে করি। সেটি করা না গেলে তাদের টেকনোলজি এনে দেশে এই টিকা উৎপাদন করা হোক। শুধু তাই নয় দেশে উৎপাদিত ‘টিভি০০৫’ টিকাটি দেশেই তৈরির বিষয়ে মার্কিন প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গেও আলোচনা শুরু করা দরকার।

এই টিকার বিষয়ে আইসিডিডিআর’বি জানায়, প্রথমবারের মতো ডেঙ্গুপ্রবণ বাংলাদেশে একটি সম্ভাবনাময় ডেঙ্গু টিকার গবেষণা সম্পন্ন হয়েছে। আইসিডিডিআর,বি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভার্মন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউভিএম) লার্নার কলেজ অব মেডিসিনের গবেষকদের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত গবেষণায় দ্বিতীয় ধাপে ১৯২ জন মানুষের মধ্যে টিভি০০৫ নামের টিকাটির সফল ট্রায়াল চালানো হয়।

জানা যায়, ২০১৫ সাল থেকে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নিয়ে পড়াশোনাসহ পরীক্ষা চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় সক্ষমতা তৈরি করা হয়। পরে ২০১৬ সাল থেকে এর দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু হয়। এর আওতায় এক থেকে ৪৯ বছর বয়সী ১৯২ জনের ওপর টিকা প্রয়োগ করা হয় এবং পরবর্তী তিন বছর ধরে তাদের পর্যবেক্ষণ করা হয়। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সবাই স্বেচ্ছায় এতে অংশ নেন এবং তাদের দৈব-চয়ন পদ্ধতিতে অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচন করা হয় বলে জানানো হয়। আইসিডিডিআর,বি এবং ইউভিএমের ভ্যাকসিন টেস্টিং সেন্টারের (ভিটিসি) গবেষকরা ২০১৫ সালে ‘ডেঙ্গু ইন ঢাকা ইনিশিয়েটিভ (ডিডি)’ শীর্ষক গবেষণাটি শুরু করে। এই সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার লক্ষ্য ছিল ডেঙ্গু টিকার উন্নয়নে বাংলাদেশকে সম্পৃক্ত করা। ২০১৫ থেকে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল, ল্যাবরেটরি পরীক্ষণ অবকাঠামো এবং প্রারম্ভিকভাবে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব অধ্যয়ন সংশ্লিষ্ট গবেষণার জন্য আইসিডিডিআর,বিতে প্রয়োজনীয় সক্ষমতা তৈরি করা হয়।

আইসিডিডিআর’বির গবেষক দলের প্রধান ড. রাশিদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, টিকা দেওয়ার আগে এদের সবাইকে চারটি আলাদা ভাগে ভাগ করা হয়। এদের মধ্যে এর আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন এমন ব্যক্তিও ছিলেন। তিনি বলেন, ডেঙ্গুপ্রবণ বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আইসিডিডিআর,বি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইউভিএমের লার্নার কলেজ অব মেডিসিনের গবেষকরা একটি উৎসাহব্যঞ্জক টেট্রা ভ্যালেন্ট ডেঙ্গু টিকা অর্থাৎ ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ধরনের বিরুদ্ধেই উপযোগী টিকা নিয়ে গবেষণা সম্পন্ন হয়েছে। গবেষণায় ব্যবহৃত একডোজের ডেঙ্গু টিকা টিভি-০০৫ মূল্যায়ন করে দেখা যায় এটি শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রয়োগের জন্য নিরাপদ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সক্ষম। গবেষণার ফলাফল সম্প্রতি দ্যা ল্যানসেট ইনফেকশাস ডিজিজেস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ডেঙ্গু একটি মশাবাহিত ভাইরাস যা বিশ্বব্যাপী, বিশেষ করে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে একটি বড় সমস্যা হয়ে উঠেছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির মৃদু লক্ষণে জ্বর এবং হাড়ের ব্যথা হয় এবং গুরুতর ক্ষেত্রে শক, রক্তপাত এবং অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যুও ঘটে। সাধারণত ডেঙ্গুর চারটি ধরন (ডেন ১, ২, ৩, ৪) বা সেরোটাইপ এককভাবে বা সম্মিলিতভাবে সক্রিয় থাকতে পারে। যে কোনো সেরোটাইপই একজন মানুষকে অসুস্থ করতে পারে। তবে অন্য কোনো সেরোটাইপ দিয়ে দ্বিতীয়বার সংক্রমিত হলে আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থা গুরুতর হওয়ার আশংকা বেড়ে যায়। তাই আমাদের এই টিকা তৈরির প্রাথমিক ভাবনা। এবং আমরা সাফল্যের পথে এগুচ্ছি।

বাংলাদেশ, বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ (১,১১৯জন/বর্গকিমি) দেশগুলোর মধ্যে একটি, এখানে প্রায় ১৭ কোটি লোকের বসবাস। বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঘটেছে, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এর আকার এবং তীব্রতা আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছরের চলমান ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুতর এবং ঢাকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর ভয়ানক প্রভাব ফেলেছে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোতেও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে, তরল খাবার ব্যবস্থাপনা এবং উপসর্গ নিয়ন্ত্রণেই ডেঙ্গুর একমাত্র প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থা। তাই বিশ্বব্যাপী  ডেঙ্গুর চারটি সেরোটাইপের বিরুদ্ধে একটি কার্যকরী টিকা উন্নয়ন গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।

গবেষণার বিষয়ে রাশিদুল হক আরও বলেন, একটি কার্যকর এবং টেট্রা ভ্যালেন্ট ডেঙ্গু টিকা বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব গুরুতর হয়ে উঠছে। বাংলাদেশের মানুষের অংশগ্রহণে টিভি-০০৫ টিকার গবেষণা করতে পেরে আমরা গর্বিত এবং আশা করি আমাদের কাজ ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে একটি কার্যকর টিকা প্রাপ্তি ত্বরান্বিত করবে। তিনি বলেন, টিভি-০০৫ টিকাটি হলো একমাত্র একক ডোজের টেট্রা ভ্যালেন্ট ডেঙ্গু টিকা, যা এই টিকাটির একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য- যোগ করেন কির্কপ্যাট্রিক (ইউভিএম)। তিনি বলেন, এটি ডেঙ্গুর চারটি সেরোটাইপের সব কয়টির বিরুদ্ধেই ইমিউনরেসপন্স তৈরি করে, যা যে কোনো টেট্রা ভ্যালেন্ট ডেঙ্গু ভ্যাকসিনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। উভয় গবেষকই আশা প্রকাশ করেন যে এই গবেষণালব্ধ ফলাফল বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জন্য উপকারী হবে।

প্রতিটি টেট্রা ভ্যালেন্ট ডেঙ্গু টিকার মূল লক্ষ্য থাকে ডেঙ্গুর সব সেরোটাইপের বিপরীতে প্রয়োজনীয় ইমিউন রেসপন্স বা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি করা। সানোফি ফার্মাসিউটিক্যালস এবং তাকেদা ফার্মাসিউটিক্যালস অন্য টেট্রা ভ্যালেন্ট ডেঙ্গু টিকা সফলতা পেয়েছে। তিন ডোজের সানোফি টিকাটি নয় বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে যারা অতীতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে তাদের জন্য সীমাবদ্ধ। অন্যদিকে দুই ডোজের তাকেদা টিকাটি শুধুমাত্র ডেঙ্গু সেরোটাইপ ডেন-২-এর ক্ষেত্রে সর্বোত্তম প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। সারা বিশ্বে চলমান অনেকগুলো চলমান গবেষণার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডিডি দলের দ্বারা এই টেট্রা ভ্যালেন্ট ডেঙ্গু টিকার কার্যকারিতা, স্থায়িত্ব এবং রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পর্কে গবেষণা।



[ad_2]

Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত