[ad_1]
২০১৬ সালের জুলাইয়ে ভারতের গুজরাটে গো হত্যার দায়ে পুরো পরিবারকে কাপড় খুলে জনসম্মুখে মারধর করে ধারণ করা হয় ভিডিও। এই ঘটনাটি শুনে অনেকে ভাবতে পারেন হয়তো এই অকথ্য নির্যাতনটি করা হয়েছে কোন মুসলিম পরিবারের উপর কিন্তু না ঘটনাটি ঘটেছে হিন্দু ধর্মেরই তথাকথিত নিচু জাত দলিত সম্প্রদায়ের এক পরিবারের সাথে।
উল্লেখিত ঘটনাটি, ২০২৪ সালের ১২ এপ্রিল বিবিসি ইন্ডিয়ার একটি ভিডিও প্রতিবেদনের। প্রতিবেদনে উঠে আসে, শুধুমাত্র এই একটি ঘটনা না, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ভারতের জাত ও বর্ণবাদের নামে একই ধর্মের লোকেদের উপর নির্যাতিত হয়ে আসা অসংখ্য তথ্য । হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সবচেয়ে নিচু জাতকে বলা হয় দলিত। এই সম্প্রদায়ের মানুষকে তারা বলে থাকেন অচ্ছুত অর্থাৎ যাদের ছোঁয়া যায় না ।
২০২৩ সালের ৩ জুন ন্যাশনাল জিওগ্রাফীর একটি প্রতিবেদনে উঠে আসে কিভাবে ভারতের এই অচ্ছুত সম্প্রদায় বছরের পর বছর ধরে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ভিউর ২০০০ সালের করা এক সমীক্ষা মতে ভারতের দলিত সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ২৫,৪৫৫ অপরাধ সংঘঠিত হয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি ঘন্টায় দু’জন দলিতকে লাঞ্ছিত করা হয়। প্রতিদিন তিন জন দলিত নারী ধর্ষনের শিকার হয়। দু’জন দলিতকে হত্যা করা হয় এবং দুটি দলিত বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। যদিও এর প্রকৃত চিত্র আরো ভয়ংকর।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর একটি গবেষণাপত্রে দেখা যায়, বছরের পর বছর ধরে কিভাবে দলিত সম্প্রদায় নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। বিভিন্ন কল কারখানায় দলিত পরিবারের সদস্যরা। সারাদিনের হাড়ভাঙ্গা খাটনি শেষে তারা শহর বা গ্রামের শেষ প্রান্তে তাদের কুড়েঘরে ফিরেন। যেখানে নেই বিদ্যুৎ বা পানির মতো মৌলিক সুবিধা।
এমনকি বেশিরভাগ দলিত পরিবারের সদস্যরা দু’বেলা খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন। খাবার যোগা করাই যেখানে অনিশ্চিত, সেখানে সন্তানদের পড়ালেখা তো বিলাসিতা। তাই প্রজন্মের পর প্রজন্ম তারা শোষণের শিকার হচ্ছে।
২০২৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ভারতীয় গণমাধ্যম দা হিন্দুতে এক প্রতিবাদের প্রকাশিত হয় ,যেখানে বলা হয় ২০২২ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী উত্তর প্রদেশ ,রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশ এই তিন অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ অত্যাচার করা হয় দলিত পরিবারকে, এমনকি প্রায় ৯৭.৭% দলিত নির্যাতনের ঘটনা এই অঞ্চলে ঘটে।
প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয় যে, সবচেয়ে বড় আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে দিন দিন দলিতদের উপর অত্যাচার বৃদ্ধি পেলেও বিচারের হার সবচেয়ে কম। বহুবার ভারতের সচেতন নাগরিক ও দলিত সম্প্রদায়ের লোকেরা আন্দোলন করেছেন কিন্তু কোনো ফলাফল এখনো চোখে পরেনি।
বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিয়ে ভারতের মিডিয়ার একের পর এক প্রপাগান্ডা চলমান রয়েছে। অথচ সে দেশে শুধু মুসলিমরা নয় নিজ ধর্মের হিন্দুরাও বর্ণবাদের শিকার হয়ে আসছে। বছরের পর বছর, প্রজন্মের পর প্রজন্ম থেকে।
সময় হয়তো চলে এসেছে, যেখানে ভারতীয় এসব গণমাধ্যমের উচিত হবে অন্যদেশ নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে নিজ দেশের সংখ্যালঘুদের খোঁজ রাখা।
[ad_2]
Source link