[ad_1]
পৃথিবীর সব বাবাই তাঁদের হৃদয়ে ভালোবাসার সমুদ্র ধারণ করেন। এদিক দিয়ে আমার বাবাকে অন্য দশজন বাবার কাছ থেকে আলাদা করা ঠিক হবে না—তিনি অন্য রকম ছিলেন সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে। তাঁর মাথার ভেতর কেমন করে জানি কিছু রঙিন পোকা ঢুকে গিয়েছিল। ঐ সব পোকা অনবরত তাঁর মাথায় স্বপ্ন তৈরি করত। মধুর সব স্বপ্ন-সংগীত, সৌন্দর্য, সাহিত্য।
আমাদের সিলেটের মীরাবাজারের বাসায় কিছুদিন পরপর বসত গানের আসর। আসতেন অনেকেই, তাঁদের মধ্যে একজনের কথা খুব মনে পড়ে—সুরসাগর প্রাণেশ দাস। আসতেন কবি-সাহিত্যিকরা। শুধু স্থানীয় কবি-সাহিত্যিকরাই নন—চিঠি লিখে মনিঅর্ডারে টাকা পাঠিয়ে দূরের জনকে আনতেন।
বাবার সময় কাটত মহাসুখে। মাঝে মাঝে সাহিত্যচর্চার জন্যে তিনি অফিস থেকে ছুটি নিতেন। এই ছবিটি খুব চোখে ভাসে বুকের নিচে বালিশ দিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে আছেন। ক্রমাগত লিখে যাচ্ছেন, তাঁর চোখে–মুখে গভীর আনন্দ। এই আনন্দের উৎস কোথায়, খুব জানতে ইচ্ছে করত।
তাঁর সাহিত্য সাধনার স্বীকৃতি হিসেবে ঘরে আমরা একটা বাঁধানো সার্টিফিকেট দেখতাম। সেখানে লেখা—ফয়জুর রহমানকে সাহিত্য সুধাকর উপাধি দেয়া হলো। এই উপাধি তাঁকে কারা দিয়েছেন, কেন দিয়েছেন, কিছুই মনে নেই, তবে তাঁর কবরের নামফলকে আমরা এই উপাধি গভীর মমতায় বসিয়ে দিয়েছি। বাবা ছিলেন স্বপ্ন পাওয়া মানুষ। নানান ভঙ্গিতে তাঁর স্বপ্ন বাস্তবে প্রকাশ পেত আর তার ঝামেলা পোহাতে হতো আমার মাকে। যেমন একবার তিনি তাঁর বেতনের বড় একটা অংশ খরচ করে একটা বেহালা কিনে ফেললেন। উদ্দেশ্য বেহালাবাদক হবেন। তাঁর সময় হলো না। আমরা তাঁর পুত্রকন্যারা বেহালায় হাত মক্শ করতে করতে অল্প সময়ের মধ্যে বেহালার দফা শেষ করলাম। কিছুদিন পর সস্তায় একটা ঘোড়া কিনে ফেললেন। আমাদের মীরাবাজারের বাসার সামনের একটা সুপারিগাছে সেই ঘোড়া বাঁধা থাকত। আসাদ নামের একজন কাজের লোক সেই ঘোড়াকে ছোলা খাওয়াত। আমরা বাচ্চারা সেই প্রাণীটির ভয়ে অস্থির ছিলাম।
পরিষ্কার মনে আছে, ঘোড়ার কাছে আমাদেরকে নিয়ে গেলেই আমরা বিকট চিৎকার করতাম। দু’মাসের মধ্যে এই প্রাণীটি বিক্রি করে বাবা একটা হারমোনিয়াম কিনলেন। আমরা সকাল–বিকাল সেই হারমোনিয়াম ঘিরে বসতাম এবং প্রাণপণে চেঁচাতাম—খোলো খোলো দ্বার, রাখিয়ো না আর বাহিরে আমায় দাঁড়ায়ে।
[ad_2]
Source link