[ad_1]
চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে সারবোঝাই ‘এমভি আল-বাখেরা’ জাহাজে সাত খুনের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফান (২৫) নামের ওই জাহাজের এক স্টাফকে। মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে ইরফানকে র্যাব-৬-এর সহযোগিতায় বাগেরহাটের চিতলমারী থেকে গ্রেফতার করে র্যাব-১১ কুমিল্লার সদস্যরা। আকাশ মণ্ডল বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট এলাকার জগদীশ মণ্ডলের ছেলে।
আকাশ মণ্ডলের বরাতে র্যাব জানিয়েছে, নিয়মিত বেতন-ভাতা ও ছুটি না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে সে প্রথমে জাহাজের মাস্টারকে (চালক) খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে হত্যা করে। জাহাজের অন্য ব্যক্তিরা জীবিত থাকলে সহজে ধরা পড়ে যাবে ভেবে বাকি সবাইকে হত্যার পরিকল্পনা করে। কিন্তু তাদের মধ্যে একজন বেঁচে যান।
বেতন-ভাতা সম্পর্কে ‘এমভি আল-বাখেরা’ জাহাজের এক মালিক দিপলু রানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বেতন-ভাতা নিয়মিত পরিশোধ করা হয়নি—এ অভিযোগ সত্য নয়। নভেম্বর মাসেরও অর্ধেক বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। এমনকি সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) যেদিন এ ঘটনা ঘটেছে সেদিন সকালেও মাস্টার (চালক) কিবরিয়ার ব্যাংক হিসাবে এক লাখ টাকা দেওয়া হয়। তবে আমরা মাস্টারের ব্যাংক হিসাবে টাকা দিয়ে থাকি। বাকি স্টাফদের তিনিই (মাস্টার) বেতন দিয়ে থাকেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বেতন-ভাতার কারণে মারা হয়েছে বলে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, আসলে তা কতখানি সত্য তা বুঝতে পারছি না। বেতন-ভাতার সমস্যা হলে স্টাফদের সংগঠন আছে। ওই সংগঠন খুবই শক্তিশালী। এরকম হলে জাহাজ বেরও করা যেত না। তবে এ বিষয়ে আমি বেশি কিছু বলতে পারবো না। এ বিষয় নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্ত করছে। তদন্তে এর সত্যতা উঠে আসবে।’
আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফানকে গ্রেফতারের পর র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস দাবি করেন, দীর্ঘদিন ধরে বেতন-ভাতা না পাওয়া ও দুর্ব্যবহারের ক্ষোভ থেকে আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফান জাহাজের মাস্টার গোলাম কিবরিয়াসহ সবাইকে হত্যা করে। ইরফান জাহাজের সুকানির সঙ্গে ইঞ্জিন রুমে কাজ করতো।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইরফানের দেওয়া তথ্যমতে র্যাব আরও দাবি করে, জাহাজের বাজার করার জন্য ইরফান পাবনার একটি বাজারে নেমেছিল। সেখান থেকে তিন পাতা ঘুমের ওষুধ কিনে নেয়। আর যে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে সবাইকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় সেটি আগেই জাহাজেই ছিল। কুড়ালটি জাহাজের নিরাপত্তার জন্য রাখা হয়েছিল। আগের দিন রাতের খাবার রান্নার সময় ইরফান জাহাজের বাবুর্চির অগোচরে খাবারের মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয়। সেই খাবার খেয়ে সবাই অচেতন হয়ে পড়লে হাতে গ্লাভস পরে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে মাস্টারসহ সবাইকে হত্যা করে সে। ঘটনা যাতে জানাজানি না হয় সেজন্য ইরফান মাস্টারসহ সবাইকে হত্যা করে।
সংস্থাটির দাবি, যখন সবাইকে কুপিয়ে হত্যা করে তখন জাহাজ মাঝনদীতে নোঙর করা ছিল। পরে সবার মৃত্যু নিশ্চিত করে নিজে জাহাজ চালিয়ে হাইমচর এলাকায় এসে অন্য ট্রলার দিয়ে পালিয়ে যায় আকাশ।
উল্লেখ্য, চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে ‘এমভি আল-বাখেরা’ নামের সার বহনকারী একটি জাহাজ থেকে সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকাল ৩টায় পাঁচ জনের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ সময় আরও তিন জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুজন মারা যান। বেঁচে থাকা জুয়েল নামে একজন ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় গ্রেফতার আকাশ মণ্ডলের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
[ad_2]
Source link