Homeদেশের গণমাধ্যমেআদালতে কাঁদলেন ছাগলকাণ্ডের মতিউর

আদালতে কাঁদলেন ছাগলকাণ্ডের মতিউর

[ad_1]

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে প্রথম কর্মকর্তা হিসেবে আমাকে ওএসডি করে। গোয়েন্দাদের ব্যবহার করে রাসেলস ভাইপার সাপের আতঙ্ক থেকে জনগণের দৃষ্টি অন্য দিকে সরাতে ছাগলকাণ্ডে আমার পরিবারকে ভাইরাল করে বিগত সরকার। এরপর আমাদের পরিবারের সাথে কতকিছু জড়িয়ে দেওয়া হলো। আমার গল্প শুনলে প্রত্যেকটা হৃদয় কাঁদবে। দয়া করে, না জেনে একটা পরিবারকে ধ্বংস করবেন না। 

এভাবেই ক্রন্দনরত অবস্থায় আদালতের উদ্দেশে এসব কথা বলেন রাজধানীর ভাটারা থানায় অস্ত্র আইনে দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমান।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে তাকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের হাজতখানায় হাজির করা হয়। আধ ঘণ্টা পর বিকাল ৫ টায় তাকে বিচারক নাজমিন আক্তারের আদালতে হাজির করে।  এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভাটারা থানার উপ-পরিদর্শক রুবেল মিয়া মামলায় তাকে দশ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থাকায় দুদক মামলা দায়ের করেছে। আজ তার স্ত্রীকে সেই মামলায় কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন মহানগর দায়রা জজ আদালত। এই মতিউর আওয়ামী ফ্যাসিস্ট রেজিমে সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের মধ্যে অন্যতম। তার হাত ধরে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। দুদকের মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে অভিযান চালালে তার বাসা থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এই অস্ত্র বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের বিপক্ষে ব্যবহার হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে তাকে রিমান্ডে নিতে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। আমরা তার সর্বোচ্চ দশদিনের রিমান্ড চাই।

এ সময় আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট আবু সুফিয়ান তার রিমান্ড বাতিল চেয়ে শুনানি করেন। এসময় তিনি বলেন, আসামি মতিউর তার নিজ যোগ্যতাবলে এনবিআরের কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি তার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে সরকারের দেওয়া উপহারে অনেক টাকা অর্জন করেছেন। তার অবৈধ কোনও সম্পদ নেই। আর আজ যে মামলায় তাকে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে সেখানে রিমান্ডে নেওয়ার কোনও যৌক্তিকতা নেই। তিনি টেস্ট কেস হিসেবে এক রাউন্ড গুলি ফায়ার করেছিলেন তবে ভুলবশত জিডি করেননি। আর যে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে সেটা লাইসেন্স করাই ছিল, তবে নবায়ন করা ছিল না। রিমান্ডে নিলে তিনি এসব কথাই বলবেন। এর জন্য রিমান্ডের প্রয়োজন নেই।

শুনানি চলাকালে মাগরিবের আজান হলে মতিউরের আইনজীবী আদালতকে বলেন, তিনি (মতিউর) রোজা ছিলেন। এসময় আদালতে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা তাকে পানি পান করান।

এরপর আদালত মতিউরের বক্তব্য শুনতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কাস্টমসে থাকাকালীন কাস্টমের অটোমেশন হয়। আমি আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধা নেইনি। বরং আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১ম কর্মকর্তা হিসেবে আমাকে ওএসডি করা হয়। আমাকে শিবির ক্যাডার হিসেবে তকমা দিয়ে প্রায় দেড় বছর ওএসডি করে রাখে সরকার। পরবর্তীতে আমি পুনরায় চাকরিতে যোগদান করি। আমার দেওয়া সিদ্ধান্তে পোশাক খাতে সরকারের ২৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পায়। আমার এসব উদ্যোগের জন্য তৎকালীন সরকারের প্রভাবশালীদের রোষানলে পড়তে হয়। অনেকেই বিভিন্নভাবে কর ফাঁকি দিতে চেয়েছে। সেজন্য আঘাতপ্রাপ্তরা আমার পেছনে লেগে যায়। আমাকে বিভিন্ন জায়গায় বদলি করা হয়। এক পর্যায়ে আমাকে জোর করে রাজস্ব আপিল ট্রাইব্যুনালে বসায়। এখানে কোনও আইনজীবী বলতে পারবেন না ট্রাইব্যুনালে থাকাবস্থায় আমি এক টাকার দুর্নীতি করেছি। ট্রাইব্যুনালের ১২ হাজার মামলা জট নিষ্পত্তি করেছি।

ভাইরালের ব্যাপারটা তিনি বলেন, মূলত তখনকার রাসেলস ভাইপার সাপের আতঙ্ক থেকে জনগণের দৃষ্টি সড়াতে ছাগলকাণ্ডে আমার পরিবারকে জড়ানো হয়। আমি ৬ বছর যাবৎ সেই ছেলের কাছ থেকে ডিটাচড্ (আলাদা) ছিলাম। এই সুযোগে সরকার গোয়েন্দাদের ব্যবহার করে আমার ষোলো বছরের ছেলেকে দিয়ে নাটক মঞ্চায়ন করে। এক পর্যায়ে কান্নারত অবস্থায় তিনি বলেন, সব কথা তো বলতে পারছি না তবে আমার গল্প শুনলে প্রত্যেকটা হৃদয় কাঁদবে। কোন কিছু না জেনে, দয়া করে একটা পরিবার ধ্বংস করবেন না। ইনশাআল্লাহ আমাদের ফ্যামিলির বিরুদ্ধে মামলা টিকবে না।

উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের ব্যাপারে তিনি বলেন, টেস্ট করতে আমি একটি মিস ফায়ার করেছিলাম। তবে এ বিষয়ে জিডি না করাটা আমার মিস্টেক হয়েছে।

এরপর আবারও প্রসিকিউটর ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। পরে আদালত তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন।

জানা গেছে, দুদকের রিকুইজিশনে ডিবি পুলিশ মতিউর রহমানকে গ্রেফতারে অভিযান চালায়। আসামির অবস্থান শনাক্ত করে বুধবার সকাল পৌনে ৭টার দিকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় তার বাসায় প্রবেশ করে। ডিবি পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি অস্ত্রের কথা স্বীকার করেন। এসময় তিনিই শয়নকক্ষের আলমারি থেকে একটি বিদেশি পিস্তল বের করে দেন।

রিমান্ড আবেদনের বলা হয়, অস্ত্রের বিপরীতে ২৫ রাউন্ড সীসা কার্তুজ উল্লেখ থাকলেও ১ রাউন্ড গুলি পাওয়া যায় নাই। তার অস্ত্রের লাইসেন্সের মেয়াদ ২০২১ সালে উত্তীর্ণ হয়েছে এবং অনুদ্ধারকৃত ১ রাউন্ড গুলি সংক্রান্তে জিজ্ঞাসাবাদ করলে কোনও সন্তোষজনক জবাব তিনি দিতে পারে নাই। অসৎ উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি নিজ হেফাজতে রাখার অপরাধের সত্যতা পাওয়া গেছে।

এ ঘটনায় আজকে ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক বেলাল হোসেন ভাটারা থানায় অস্ত্র আইনে মামলা করেন।

উল্লেখ্য, মতিউর রহমানের সাথে তার স্ত্রী লায়লা কানিজকেও গ্রেফতার করা হয়। দুদকের মামলায় আজ তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আগামী ১৯ জানুয়ারি তাকে সাত দিনের রিমান্ড নেওয়ার আবেদনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।



[ad_2]

Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত