Homeপ্রবাসের খবরঅভিমানে ফুটবল ছাড়লেন সাফজয়ী আরেক নারী!

অভিমানে ফুটবল ছাড়লেন সাফজয়ী আরেক নারী!

[ad_1]

২০২৩ সালের জানুয়ারিতে অভিমান করে ফুটবল ছেড়েছিলেন তার আগের বছর সাফজয়ী দলের সদস্য আনুচিং মগিনি। সাফের পর ক্যাম্পে ছিলেন তিনি। জানুয়ারিতে তৎকালীন কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের দল থেকে বাদ পড়ার পর আনুচিং ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ফুটবলকে বিদায় জানান।

ঠিক দুই বছর পর আনুচিংয়ের যমজ (দুই মিনিটের বড়) বোন আনাই মগিনি একইভাবে ফুটবল ছেড়ে দিলেন!

ছুটি শেষে ১৫ জানুয়ারি আবার শুরু হয়েছে সিনিয়র নারী ফুটবলারদের ক্যাম্প। অক্টোবরে সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে অনির্দিষ্টকালের জন্য সিনিয়র ফুটবলারদের ছুটি দিয়েছিল বাফুফে। সেই ছুটি শেষ হয়েছে ১৪ জানুয়ারি।

৩১ ফুটবলারকে ক্যাম্পে যোগ দিতে বলা হয়েছিল। রোববার দুপুর পর্যন্ত ২৮ জন যোগ দিয়েছেন। বাকি ৩ জন অধিনায়ক সাবিনা খাতুন, আনাই মগিনি ও শামসুন্নাহার জুনিয়র। এই তিন জনের মধ্যে সাবিনা ও শামসুন্নাহার ছুটি বাড়িয়েছেন। আর আনাই ক্যাম্পে যোগ দেবেন না বলে জানিয়েছেন।

নারী ফুটবল দলের সহকারী কোচ মাহবুবুর রহমান লিটু রোববার জানিয়েছেন, ‘আনাই ক্যাম্পে যোগ দেবেন না। অন্য দুইজন তাড়াতাড়িই যোগ দেবেন। তারা দুইজনই ছুটি নিয়েছেন।’ আনাই কেন আসবেন না? ‘আমি ঠিক বলতে পারবো না। তবে সে জানিয়েছে আসবে না।’

নারী ফুটবল দলের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আনাই বিয়ে করেছেন। এখন দোকান দিয়ে ব্যবসা করছেন। ফুটবল আর খেলবেন না।’

বিষয়টি নিশ্চিত হতে ফোন করে আনাইকে পাওয়া যায়নি। বিকল্প হিসেবে তার বোন আনুচিংকে ফোন করলে তিনি জানান, ‘দিদি (আনাই) এখন বাসায় নেই। আরেক দিদির বাসায় ঘুরতে গেছে। সে কারো সাথে যোগাযোগ করছে না। তার ফোন নম্বরও বদলিয়েছে। নতুন নম্বর কাউকে দিতে বারণ আছে।’

আনাই ক্যাম্পে যোগ দিচ্ছেন না কেন? ‘তার (আনাই) সিদ্ধান্ত ছিল ক্যাম্পে যাবেন। হঠাৎ মত পাল্টিয়েছেন। বলছেন গিয়ে কী করবেন? ক্যাম্পে থাকে, ট্রেনিং করে কিন্তু দলে তাকে নেয় না। ২০২৪ সালে দিদি একটা ম্যাচেও নামার সুযোগ পাননি। তাই সে ক্যাম্পে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একই কারণে আমিও দুই বছর আগে ফুটবল ছেড়ে দিয়েছি’- বলেছেন আনুচিং মগিনি।

আনুচিং মগিনি ও আনাই মগিনি দুই বোনই ছিলেন ২০২২ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের দলে। খেলার সুযোগ পাননি কেউ। ক্যাম্পে থাকলেও ২০২৪ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের দলেই নেওয়া হয়নি আনাই মগিনিকে। সাফের আগে বাংলাদেশ ভুটান সফর করেছিল নারী ফুটবল দল। সে সফরেও বিবেচনা করা হয়নি আনাইকে। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস এবং বছরের পর বছর খেলার সুযোগ না পাওয়ার অভিমান থেকেই ছোট বোনের পথ ধরে অভিমান করে ফুটবলই ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আনাই।

অনেকে বলছেন আনাই বিয়ে করেছেন। এখন ব্যবসা করছেন। কথাটি ঠিক? ‘এখন তো বড় হয়েছে। কারো সাথে রিলেশন হতেই পারে। তবে বিয়ের বিষয়টি ঠিক না। আর ব্যবসার কথা বলছেন, আমরা টাকা কোথায় পাবো? বাড়ির পাশে জমি আছে সেখানেই চাষাবাদ করি’- বলছিলেন আনাইয়ের ছোট বোন আনুচিং।

খাগড়াছড়ির সাতভাই পাড়া গ্রামের একটি পাহাড়ের পাদদেশে আনাই-আনুচিংদের ঘর। ২০০৩ সালের ১ মার্চ ওই গ্রামের রিপ্রু মঘ ও আপ্রুমা মগিনী দম্পতির ঘরে জন্ম যমজ এই দুই বোনের। বাড়ির পাশে আছে একটি রাবার বাগান। সেখানে এক টুকরো খোলা জায়গায় বল নিয়ে খেলা করতো দুই মিনিট আগে-পরে পৃথিবীতে আসা যমজ বোন আনাই আর আনুচিং।

একদিন দেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন, ফুটবল খেলে গরীব বাবা-মায়ের হাতে টাকা তুলে দেবেন- এই স্বপ্ন কখনোই ছিল না তাদের। বরং বড় হয়ে অগ্রজ তিন ভাই আর দুই বোনের মতো বাবা-মায়ের কৃষি কাজে সহায়তা করার মানসিক প্রস্তুতিই ছিল তাদের।

কিন্তু এই পাহাড়ি দুই মেয়ের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছিল বঙ্গমাতা প্রাথমিক বিদ্যালয় স্কুল ফুটবল। সাতভাই পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে অভিষেক। আনাই-আনুচিংদের স্কুল পৌঁছে যায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্যায়ে।

তাদের স্কুল হারলেও হারেননি আনাই-আনুচিং। রাঙ্গামাটির মগাছড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় জায়গা করে নিয়েছিলো চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে জাতীয় পর্যায়ে। ২০১০ সালে চ্যাম্পিয়নও হয়েছিল রাঙ্গামাটির মগাছড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বীরসেন চাকমার চোখ আটকে ছিল আনাই-আনুচিংয়ের খেলায়।

তাই তো জাতীয় পর্যায়ের দল গড়তে ডাক পড়েছিল তাদের। আর পেছনে তাকাতে হয়নি দুই বোনকে। প্রাথমিক বিদ্যালয় পেরিয়ে হাই স্কুল পর্যায়ে দুই বোন ফুটবল খেলেছেন একসঙ্গে। ২০১৪ সালে জেএফএ কাপে পারফরম্যান্স দিয়ে তারা কেড়ে নেন নারী ফুটবলের তৎকালীন প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের চোখ। ডাক পান বাফুফের ক্যাম্পে।

২০১৫ সালে তাজিকিস্তানে অনুষ্ঠিত এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের চূড়ান্ত পর্বের দলেও একসঙ্গে জায়গা করে নেন পাহাড়ি দুই বোন। পরের বছরই তাদের অভিষেক জাতীয় দলে। ভারতের শিলিগুড়িতে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে পড়েন লাল-সবুজ জার্সি।

অনূর্ধ্ব-১৫, ১৬, ১৮ সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে সাফল্য পাওয়ার পর তৎকালীন সরকার প্রধান থেকে কয়েক দফা অর্থ পুরস্কার দিয়েছিলেন মেয়ে ফুটবলারদের। আনাই-আনুচিংয়ের অর্জন তাই অন্য যেকোনো নারী ফুটবল পরিবারের চেয়ে বেশি।

নারী ফুটবলে তারা ছিলেন এক বৃন্তে ফোটা পাহাড়ী দুটি ফুল। দুই বছরের ব্যবধানে ঝরে পড়লেন তারা। দুই মিনিটের ছোট বোন ফুটবল ছেড়েছিলেন ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে, দুই বছর পর সেই জানুয়ারিতেই বিদায়-বার্তা দুই মিনিটের বড় বোন আনাই মগিনির। আঁখি খাতুন, সিরাত জাহান স্বপ্না আর আনুচিংয়ের পথ ধরলেন আরেক অভিমানী আনাই মগিনি।



[ad_2]

Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত