[ad_1]
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) রেজিস্ট্রার অফিসের সহকারী রেজিস্ট্রার (প্রশাসন-১) সুরাইয়া ইয়াসমিন কবিতাকে ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ সংক্রান্ত আইন পরিবর্তন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও বিষয়টি অস্বীকার করেছে ঢাবি কর্তৃপক্ষ। কবিতাও বলেছেন, তার কিছু জানা নেই। এদিকে, এমন কাণ্ড ঘটানোয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
জানা গেছে, ২০০৫ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বিএনপি নেতা ভাইয়ের প্রভাব খাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির উচ্চমান সহকারী পদে চাকরি নেন সুরাইয়া ইয়াসমিন কবিতা। কিন্তু ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সুযোগ-সুবিধার জন্য আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গেই সখ্যতা গড়ে তোলেন।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফলে সরকার পতনের পর নিজের রূপ পাল্টে ফেলেছেন তিনি। নিজেকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নির্যাতিত দাবি করে সখ্য তৈরি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে। শুধু তাই নয়, এখন রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে নিয়োগ সংক্রান্ত বিভিন্ন কমিটিতে যুক্ত হওয়ার জন্য জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া, শিক্ষাগত যোগ্যতায় পিছিয়ে থেকে এবং চাকরির শর্তপূরণ না করেই ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ পেতে তোড়জোড় চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ঢাবির প্রশাসনিক ভবন সূত্রে জানা গেছে, রেজিস্ট্রার অফিসে কর্মরত সুরাইয়া ইয়াসমিন কবিতা ডিগ্রি পাস কোর্সে তৃতীয় শ্রেণি পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী, শিক্ষা জীবনে কোনো পরীক্ষায় তৃতীয় শ্রেণি থাকলে ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদে আবেদন করতে পারে না। ন্যূনতম দ্বিতীয় শ্রেণি থাকতে হবে। আবার প্রচলিত নিয়মে ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদে পদোন্নতি পেতে তার সহকারী রেজিস্ট্রার পদে চাকরির মেয়াদ হতে হবে অন্তত ৫ বছর। কিন্তু ৭ম গ্রেডের চাকরিতে থাকা এই কর্মকর্তা অবৈধভাবে বাগিয়ে নিতে চাচ্ছেন ৪র্থ গ্রেড সমমানের ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদ। সেজন্য তিনি বিভিন্ন দিক থেকে তদবিরও করছেন।
এমন পরিস্থিতিতে গত ২৫ ফেব্রুয়ারির সিন্ডিকেট সভায় শূণ্য পদে আবেদনের ক্ষেত্রে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে চাকরির মেয়াদ কিংবা শিক্ষাগত যোগ্যতা দুটো শর্তের মধ্যে ‘অভ্যন্তরীণ প্রার্থীর ক্ষেত্রে যে কোন একটি শর্ত শিথিলযোগ্য’ হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। কবিতার বিরুদ্ধে নিয়মবহির্ভূতভাবে পদোন্নতি পাওয়ার চেষ্টা এবং কর্মক্ষেত্রে নিজের আওতার বাইরে গিয়ে প্রশাসনে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টায় লিপ্ত থাকার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
প্রশাসনিক ভবন সূত্র আরও জানায়, কবিতাকে ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ দিতেই নিয়োগের শর্ত শিথিল করা হয়েছে। শর্ত শিথিলের পরে কবিতা আবেদনে যোগ্য হওয়ায় কয়েক দিনের মধ্যেই রেজিস্ট্রার অফিসে একটি ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রদান করা হবে। এছাড়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনী ফোরাম সিন্ডিকেট সভায় এর সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট দফতর (প্রশাসন-৫) এর কর্মকর্তারা ব্যতীত কারও উপস্থিত থাকার নিয়ম না থাকলেও কবিতা ঠিকই সর্বশেষ সিন্ডিকেট সভায় সভাকক্ষের ভিতরে ছিলেন। একাধিক সিন্ডিকেট সদস্য এবং কর্মকর্তা এ নিয়ে অস্বস্তিও প্রকাশ করেছেন।
এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরী সিদ্ধান্তগুলো দ্রুত গ্রহণের লক্ষ্যে গঠিত হয়েছে সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট টিম (এসএমটি)। যার সদস্য উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রার এবং প্রক্টর। কিন্তু ‘প্রভাবশালী’ কবিতার বিচরণ আছে এখানেও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ডেপুটি রেজিস্ট্রার কালবেলাকে বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পরে নিজেকে নির্যাতিত দাবি করে কবিতা হয়ে উঠেছেন বেপরোয়া। প্রশাসন-১ এর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে শিক্ষক নিয়োগের সিলেকশন বোর্ডের সদস্যদের নথি, সিলেকশন গ্রেড-১, স্টান্ডিং কমিটিসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজ জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিয়েছে কবিতা। ইতোপূর্বে শিক্ষকদের গুরুত্বপূর্ণ এই কাজগুলো অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ডেপুটি রেজিস্ট্রাররা করতেন।
অন্য এক সহকারী রেজিস্ট্রার জানান, কবিতা কিছু কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রশাসনিক ভবনে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। এই সিন্ডিকেট রেজিস্ট্রার ভবনের বিভিন্ন অফিসের স্বাভাবিক কাজে নিয়মবহির্ভূতভাবে খবরদারি করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট মিটিংয়ে উত্থাপিত ফাইলের ক্রম নির্ধারণ করে থাকে প্রশাসন-৫ এর ডেপুটি রেজিস্ট্রার। কিন্তু এখন তা করছেন কবিতার এই সিন্ডিকেট।
উপাচার্যের সচিব আব্দুর রহমান মিশাত, উপ-উপাচার্যের (শিক্ষা) সচিব সেলিনা আক্তার ডলি এবং উপাচার্য ঘনিষ্ঠ দুই প্রভাবশালী প্রাধ্যক্ষ, যাদের বাড়ি উত্তরবঙ্গে, এদের সহযোগিতায় এই সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন তিনি।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে অস্থায়ী ভিত্তিতে কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়মের ব্যত্যয় যাচাই করার জন্য ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এতে আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগ পাওয়া সাবেক রেজিস্ট্রার সৈয়দ রেজাউর রহমানকে আহ্বায়ক করা হয়। অথচ রেজাউর রহমান শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র নির্মাণ করে টিএসসিতে তা প্রদর্শন করেছেন। আর কমিটির সদস্য সচিব হয়েছেন সুরাইয়া ইয়াসমিন কবিতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র এবং তদন্ত সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞাসম্পন্ন কর্মকর্তা থাকতে একজন সহকারী রেজিস্ট্রারকে সদস্য-সচিব করা নিয়ে চলছে নানা সমালোচনা। অভিযোগ রয়েছে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে চাপে রেখে অনৈতিক সুবিধা আদায় করতেই তদন্ত কমিটিতে যুক্ত হয়েছেন কবিতা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে সুরাইয়া ইয়াসমিন কবিতার মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হয়। তিনি সাড়া দিয়ে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ব্যস্ত আছেন বলে কল কেটে দেন। এরপর তার সঙ্গে ফের যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র ও উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা কালবেলাকে বলেন, এই সিদ্ধান্ত (অভ্যন্তরীণ প্রার্থীর ক্ষেত্রে যে কোন একটি শর্ত শিথিলযোগ্য) যদি নেওয়া হয়ে থাকে, সেটি কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে নেওয়া হয়নি। অনেক সময় নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে ফাঁকা পদ পূরণের জন্য শর্ত শিথিল করে নিয়োগ দেওয়া হয়।
সিন্ডিকেট সভায় কবিতার উপস্থিত থাকা প্রসঙ্গে অধ্যাপক বিদিশা বলেন, সেদিন সিন্ডিকেট সভায় অনেক সিলেকশন বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। সেজন্য হয়তো তার দরকার ছিলো এজন্য সে উপস্থিত ছিল। কিন্তু ভিন্ন কোন উদ্দেশ্যে তিনি সেখানে উপস্থিত ছিল বলে মনে আমার মনে হয় না।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান কালবেলাকে বলেন, কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে টার্গেট করে এই সিদ্ধান্ত (সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত) নেওয়া হয়েছে, এটা আমি মনে করতে পারছি না। অনেকগুলো জেনারেল নীতি আছে। এই সিদ্ধান্তও একটি জেনারেল নীতিতে এসেছে।
[ad_2]
Source link