Homeজাতীয়প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর ঘিরে দুই দেশে ব্যাপক আগ্রহ

প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর ঘিরে দুই দেশে ব্যাপক আগ্রহ

[ad_1]

আগামী ২৬ মার্চ চীন সফরে যাচ্ছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সফরে তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থানকালীন প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিকভাবে বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে। 
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত বাংলাদেশের রোগীদের জন্য মেডিক্যাল ভিসা সীমিতকরণ এবং কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপোড়েনের পরিপ্রেক্ষিতে চীন ইউনান প্রদেশের তিনটি হাসপাতালকে প্রস্তুত করেছে। ইতোমধ্যে সেখানে প্রথম ব্যাচের রোগীদের চিকিৎসাও শুরু হয়েছে। 
আগামী এপ্রিলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার চীন সফরে এই সংক্রান্ত চুক্তি সইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা চীনের প্রেসিডেন্টের কাছে বাংলাদেশে দেশটির পক্ষ থেকে যৌথভাবে হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাব দেবেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্য আমদানির আহ্বান জানাবেন। ইতোমধ্যে চীনের পক্ষ থেকে আম, কাঁঠাল ও পেয়ারা আমদানির আশ্বাস দিয়েছে চীনা কর্তৃপক্ষ। 
এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর চীনের অন্তত ১৪টি কোম্পানি বাংলাদেশে ২৩ কোটি ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করেছে, যা এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে কোনো দেশের করা সর্বাধিক বৈদেশিক বিনিয়োগ। সেই কারণে প্রধান উপদেষ্টার চলতি সফর ঘিরে ঢাকা-বেজিং দুইপক্ষেরই ব্যাপক আগ্রহ উদ্দীপনা কাজ করছে। 
৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের টানাপোড়েনে কর্মী সংকটের কথা জানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বাংলাদেশীদের অনেক কম মেডিক্যাল ভিসা দিচ্ছে ভারত। এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে চীন। দেশটি বাংলাদেশী নাগরিকদের চিকিৎসা পর্যটনের বিশাল বাজারে প্রবেশের চেষ্টা করছে। একইসঙ্গে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও মজবুত করার অভাবনীয় সুযোগ পাচ্ছে বলে একাধিক কূটনৈতিক সূত্র দাবি করেছে।
নাম প্রকাশে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গত আগস্ট থেকে ভারত প্রতিদিন এক ্রধান উপদেষ্টার চীন
হাজারেরও কম মেডিক্যাল ভিসা দিয়েছে বাংলাদেশীদের। আগে এর পরিমাণ ছিল পাঁচ থেকে সাত হাজার পর্যন্ত। মূলত ভারতের দীর্ঘদিনের মিত্র শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকেই প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে শীতল সম্পর্ক বিরাজ করছে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই বাংলাদেশীদের ভারতের ভিসা দেওয়ার হার কমে গেছে।
আগস্টে ক্ষমতাচ্যুতির পর পালিয়ে ভারতে যাওয়ার পর থেকে শেখ হাসিনা সেখানেই অবস্থান করছেন। এদিকে, বিচারের মুখোমুখি করার জন্য তাকে দেশে পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের বারবার অনুরোধের পরও সাড়া দেয়নি নয়াদিল্লি।
দুই দেশের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভারত বাংলাদেশীদের ২০ লাখেরও বেশি ভিসা দিয়েছে, যাদের বেশিরভাগই ছিল চিকিৎসা ভিসা। তবে এর পর থেকে ভারত ভিসা দেওয়ার হার কমিয়ে দেওয়ার ফলে, চীন এই শূন্যস্থান পূরণ করার সুযোগ পেয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে আম, কাঁঠাল ও পেয়ারা এ তিনটি পণ্য বিপুল পরিমাণ আমদানি করতে চায় চীন। সরকারকে চীনের এ আগ্রহের কথা জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।
অন্যদিকে সম্প্রতি বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, চিকিৎসা পর্যটনের বাজারের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে’ চলতি মাসেই বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ ইউনান সফর করেছেন। ইয়াও ওয়েন গত সপ্তাহে জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর চীনের অন্তত ১৪টি কোম্পানি বাংলাদেশে ২৩ কোটি ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করেছে, যা এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে কোনো দেশের করা সর্বাধিক বৈদেশিক বিনিয়োগ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সফরকালে তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। বাংলাদেশ সরকার জানিয়েছে, চীন ঢাকা শহরে একটি ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল খোলার বিষয়ে এবং দেশটিতে চিকিৎসা নিতে যাওয়া বাংলাদেশীদের প্রবেশাধিকার সহজ করার কথা বিবেচনা করছে। এটি চীন ও বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও গভীর হওয়া এবং চিকিৎসা খাতে চীনের প্রভাব বাড়ানোর সুস্পষ্ট ইঙ্গিত।
ভারতের সঙ্গে চীনের সম্পর্কের বরফ, বিশেষ করে ২০২০ সালে লাদাখ সীমান্তে সংঘর্ষের পর, ধীরে ধীরে গলতে শুরু করেছে। তবে, চীন বাংলাদেশে নিজের অবস্থান আরও পাকাপোক্ত করতে জোরালো পদক্ষেপ নিচ্ছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘চীন বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে এবং পারস্পরিক লাভজনক সম্পর্ক আরও গভীর করতে আগ্রহী। তিনি আরও বলেছেন, চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক কোনো তৃতীয় পক্ষকে উদ্দেশ্য করে নয় এবং এই সম্পর্ক তৃতীয় পক্ষের দ্বারা প্রভাবিতও নয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
নতুন সম্পর্ক ॥ সূত্রগুলো বলছে, ভারতের ভিসা প্রক্রিয়াকরণের ধীরগতি কেবল বাংলাদেশ সরকারকেই নয় বরং দেশের সব শ্রেণি পেশার মানুষের মধ্যে বিরক্তি সৃষ্টি করেছে। এর ফলে ঢাকার পরিস্থিতি দীর্ঘদিন ভারতের জন্য অনুকূল নাও হতে পারে, কারণ তার মিত্র শেখ হাসিনার দলের শীঘ্রই ক্ষমতায় ফেরার সম্ভাবনা কম। বাংলাদেশের কূটনীতিক ও ভারত সরকারের সূত্রগুলো জানিয়েছে, ভিসা জটিলতার জন্য ভারত বারবার তার ঢাকার দূতাবাসে কর্মী সংকটের কথা উল্লেখ করেছে। তারা তাদের কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন বলেও জানিয়েছে।
শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে বাংলাদেশের জনমত ভারত সরকারের বিরুদ্ধে চলে যাওয়া এবং গত আগস্টে ধানমন্ডিতে ভারতের ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে বিক্ষোভকারীদের হামলার পর বাংলাদেশে তাদের মিশন থেকে অনেক কূটনীতিক ও তাদের পরিবারকে সরিয়ে নেয় নয়াদিল্লি।
ভারতীয় সরকারের সূত্রগুলো জানিয়েছে, তারাও চায় ভারতে চিকিৎসা নিতে আগ্রহী বাংলাদেশীরা সহজে তাদের দেশে চিকিৎসা নিতে পারুক। তারা আরও জানায়, বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা ফিরলে বাংলাদেশের ভারতীয় মিশনগুলোতে কর্মী সংখ্যা বাড়ানো হবে।
কম ভিসা দেওয়ার আরেকটি কারণ হিসেবে একটি সূত্র বলেছেন, বাংলাদেশের উত্তপ্ত পরিস্থিতি থেকে পালানোর চেষ্টা হিসেবে’ কিছু মানুষ ভারতে চিকিৎসার ভিসা ব্যবহার করছিলেন। এমন একটি সময়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ভিসা জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে, যখন ভারত বাংলাদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে যেমন- যোগাযোগ, দুইটি বন্দরে ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অবকাঠামো এবং প্রতিরক্ষা ক্রয় ইত্যাদিতে ৭ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ঋণ দিয়ে রেখেছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) একজন সাবেক মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সম্প্রতি বেজিংয়ের আমন্ত্রণে চীন সফর করেছে। চলতি সপ্তাহে ড. ইউনূস ওয়েনকে বলেন, বাংলাদেশ চীনের জন্য তার বাজার আরও উন্মুক্ত করতে প্রস্তুত। সম্প্রতি চীনের শীর্ষ সৌরশক্তি কোম্পানি লঙ্গি গ্রিন এনার্জি বাংলাদেশে নতুন অফিস চালু করেছে এবং আরও দুটি চীনা কোম্পানি বাংলাদেশে অফিস স্থাপন এবং উৎপাদন খাতে বিনিয়োগে সম্মত হয়েছে। এ ছাড়াও, চীনের রাষ্ট্রদূত ওয়েন বাংলাদেশের এক শীর্ষ বিএনপি নেতার সঙ্গে ‘পারস্পরিক উদ্বেগের বিষয়’ নিয়ে আলোচনা করেছেন। তবে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানাননি।
ভারতীয় সূত্র জানিয়েছে, আগামী মাসে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় একটি সম্মেলনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রথম সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হবে। এই প্রেক্ষাপটে একজন ভারতীয় বিশ্লেষক বলেছেন, চীনের আঞ্চলিক প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে।



[ad_2]

Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত