মাগুরায় আলোচিত শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এতে মামলার প্রধান আসামি হিটু শেখকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
শনিবার (১৭ মে) সকালে মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারক এম জাহিদ হাসান এ রায় ঘোষণা করেন।
এ সময় রায়ে বাকি তিন আসামিকে খালাস দেওয়া হয়। তারা হলেন, হিটু শেখের স্ত্রী জাহেদা বেগম এবং দুই ছেলে সজিব শেখ ও রাতুল শেখ।
এর আগে, আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে চার আসামিকে কারাগার থেকে মাগুরার বিচারিক আদালতে নেওয়া হয়।
গত ১৩ মে বেলা ১১টার দিকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত এ মামলায় আজ রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন।
তার আগে, গত ১২ মে সকাল ১০টায় মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসানের আদালতে এ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়ে দুপুর ১২টায় শেষ হয়। তবে প্রথমদিন কার্যক্রম শেষ না হওয়ায় ১৩ মে আবারও যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দিন ধার্য করা হয়।
সেদিন আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম মকুল বলেন, মাগুরার চাঞ্চল্যকর আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার যুক্তিতর্কের দিন ধার্য ছিল। আদালতে সকালে এই বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আসামিদের উপস্থিতিতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়।
তিনি আরও বলেন, এই মামলায় মোট ২৯ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। মামলাটিতে সাতটি জব্দ তালিকা ছিল। এই সাতটি জব্দ তালিকায় ১৬ জন সাক্ষী ছিল। যার মধ্যে ১২ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্যপ্রমাণসহ সাক্ষ্য দিয়ে তাদের জব্দ তালিকাকে সত্যায়ন করেছেন। জব্দ করা আলামতকে আদালতে সত্যায়ন করেছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী বলেন, এই মামলায় তিনটি মেডিকেল সার্টিফিকেট ছিল। পাঁচ ডাক্তার মেডিকেল সার্টিফিকেটে স্বাক্ষর করেছিলেন। তারা ইতোমধ্যে আদালতে সাক্ষী দিয়ে মেডিকেল সার্টিফিকেটকে সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছেন এবং মেডিকেল সার্টিফিকেটে তারা তাদের স্বাক্ষর শনাক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, সর্বোপরি এ মামলায় ২৯ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়ে আদালতে আসামি হিটু শেখের বিরুদ্ধে ২০০০ সালে নারী শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধিত আইন ২০০৩ এর ৯ এর দুই ধারাকে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সম্পূর্ণরূপে সক্ষম হয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত ৬ মার্চ মাগুরা শহরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয় আট বছরের শিশু আছিয়া। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ১৩ মার্চ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সে।
ঘটনার পর দেশজুড়ে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানান। স্থানীয় আইনজীবীরাও অভিযুক্তদের জন্য কোনো ধরনের আইনি সহায়তা না দেওয়ার ঘোষণা দেন।
মামলার মূল আসামি শিশুর বোনের শ্বশুর হিটু শেখ গত ১৫ মার্চ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। যেখানে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার ঘটনায় তিনি একাই জড়িত বলে স্বীকারোক্তি দিলেও গত ১৩ এপ্রিল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মাগুরা সদর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মামলার চার আসামির বিরুদ্ধেই অভিযোগ এনে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
এস এইচ/