কোরবানির ঈদে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য বিশেষ ঋণ দিতে বরাবরের মতো এবারও অনাগ্রহ দেখিয়েছে ব্যাংকগুলো। মাত্র ২৩২ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করেছে ৯টি ব্যাংক। পর্যাপ্ত অর্থায়নের অভাবে চামড়া সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাত বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের জন্য বিশেষ ঋণ দেয় ব্যাংকগুলো। তবে চামড়া ব্যবসায়ীরা ঋণ নিলে তা আর পরিশোধ করতে চান না। এমনকি ২ শতাংশ রেওয়াতি সুবিধা দিয়ে ঋণ পুনঃতফসিলের যে সুযোগ রাখা হয়েছে অনেকে সেটাও মানতে নারাজ। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে আগ্রহ দেখায়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিবছর ২ শতাংশ রেওয়াতি সুবিধার আওতায় চামড়া খাতে ঋণের জন্য ব্যাংকগুলোকে বিশেষ নির্দেশ দেয়। কিন্তু দেশের ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে মাত্র ৯টি ব্যাংক চলতি মৌসুমে ২৩২ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করে। বাকি ৫২টি ব্যাংক এবার চামড়া ব্যবসায়ীদের ঋণ দেয়নি।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) চেয়ারম্যান মো. শাহীন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সারা দেশ থেকে বিভিন্ন আড়তের মাধ্যমে সংগৃহীত চামড়া কিনতে নগদ টাকা প্রয়োজন হয়। ট্যানারিমালিকেরা নিজস্ব মূলধন দিয়ে সারা বছর ব্যবসা করলেও কোরবানির সময় বাড়তি নগদ অর্থের প্রয়োজন। পর্যাপ্ত নগদ ঋণ সহায়তা পেলে চামড়ায় বিড়ম্বনা কেটে যেত।
চামড়ার আড়তদার নূর ইসলাম বলেন, দেশের বেশির ভাগ কাঁচা চামড়া সংগৃহীত হয় ঈদুল আজহার সময়। কিন্তু সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে প্রতিবছর প্রায় ৩০ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়। এ জন্য চামড়া খাতে বিশেষ নজর জরুরি।
বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস ব্যবসায়ী আজম মিয়া বলেন, ব্যাংকগুলো শুধু ট্যানারিমালিক ও রপ্তানিকারকদের ঋণ দেয়। কাঁচা চামড়া ব্যবসায় জড়িত অন্যদের ঋণ দেয় না। চাহিদা অনুযায়ী টাকা পেলে চামড়া নষ্ট হওয়া ঠেকানো যেত।
ঋণ দিতে অনাগ্রহের বিষয়ে জানতে চাইলে জনতা ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মূলত চামড়া ব্যবসায়ীদের কারণে ঋণের অর্থ বরাদ্দ থাকলেও ব্যাংকঋণ বিতরণে কম আগ্রহ দেখাচ্ছে। ট্যানারি ব্যবসায়ীরা ২ শতাংশ দিয়ে ঋণ পুনঃতফসিল করতে চান না।
সোনালী ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, চামড়া খাতে ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের প্রায় ৪০ শতাংশই খেলাপি। এ জন্য বরাদ্দ থাকলেও ঋণ বিতরণ সম্ভব হয় না।