Homeঅর্থনীতিচলছে তৃতীয় দিনের কলম বিরতি, রাজস্ব কার্যক্রম স্থবির

চলছে তৃতীয় দিনের কলম বিরতি, রাজস্ব কার্যক্রম স্থবির


নির্বাহী আদেশ আজ শনিবার সরকারি অফিস, আদালতের কার্যক্রম চালু থাকলেও তৃতীয় দিনের মতো কলম বিরতি পালন করছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। সকাল ১০টা থেকে শুরু হয় কলম বিরতি, চলবে বিকেল ৩টা পর্যন্ত।

অংশীজনদের মতামত উপেক্ষা করে জারি করা এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গত বুধবার থেকে আজ শনিবার পর্যন্ত তিন দিনের কলম বিরতি চলমান। দিনের কর্মসূচি শেষে বিকেল ৩টায় সংবাদ সম্মেলনে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্ল্যাটফর্ম ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’।

জানতে চাইলে এনবিআরের অতিরিক্ত কমিশনার সাধন কুমার কুণ্ডু আজকের পত্রিকাকে বলেন, সাধারণত শনিবারে কাস্টমস ছাড়া এনবিআরের ট্যাক্স ও ভ্যাটের কার্যক্রম সাপ্তাহিক ছুটির কারণে বন্ধ থাকে। তবে নির্বাহী আদেশে সব অফিস খোলা থাকায় আমাদের কার্যক্রম চলার কথা ছিল। কিন্তু, যৌক্তিক দাবি আদায়ে আমাদের ঘোষণা অনুযায়ী কলম বিরতি চলছে। তাই এনবিআরের সব কার্যক্রম এই সময়ে বন্ধ থাকবে।

তবে ঐক্য পরিষদের ঘোষণা অনুযায়ী তিন ধরনের কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। এগুলো হলো—আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা, বাজেট ও রপ্তানি সংক্রান্ত কার্যক্রম।

গত সোমবার (১২ মে) মধ্যরাতে এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি বিভাগ করে অধ্যাদেশ জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ১৭ এপ্রিল উপদেষ্টা পরিষদে খসড়া অনুমোদনের ২৫ দিন পর এই অধ্যাদেশ জারি করা হয়।

অধ্যাদেশের খসড়াতেই আপত্তি জানিয়ে এটি বাতিলের দাবি তোলেন আয়কর ও শুল্ক ক্যাডারের সদস্যদের সমিতি। ক্যাডার সার্ভিসের বাইরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও এই দাবির পক্ষে এক জোট হন।

তবে শুরুতে কর্মকর্তাদের দাবির পক্ষে অনড় থাকলেও ধীরে পরে দুই সমিতির শীর্ষ নেতারা পিছু হটেন। আর এতে সমিতির পদে থাকা অনেক কর্মকর্তা গতকাল বুধবার পদত্যাগ করেন। অধ্যাদেশ বাতিল করে সবার মতামত নিয়ে নতুন করে অধ্যাদেশ জারির দাবিতে ঐক্য পরিষদের ব্যানারে কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন এনবিআর কর্মকর্তারা-কর্মচারীরা।

সাধন কুমার কুণ্ডু বলেন, আপনারা জানেন, আমরা যৌক্তিক দাবি নিয়ে এনবিআরের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এক জোট হয়েছি। আজকে বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

এনবিআরের এই কর্মকর্তা যোগ করেন, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ যেহেতু সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম। ফলে আজকের সংবাদ সম্মেলনে কর্মচারীরা কথা বলবেন। তবে আমরা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সবাই সেখানে উপস্থিত থাকব।

এদিকে গত বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে তিন ধরনের দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো—

১. প্রণীত রাজস্ব অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল করা;

২. জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সংস্কার সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটির প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশ করা;

৩. পরামর্শক কমিটির প্রতিবেদন এবং অর্থনৈতিক অবস্থা বিষয়ক শ্বেতপত্র আলোচনা-পর্যালোচনাপূর্বক প্রত্যাশী সংস্থাসমূহ, ব্যবসায়ী সংগঠন, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সকল অংশীজনদের মতামত নিয়ে সমন্বিত, অংশগ্রহণমূলক ও টেকসই রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কার করা।

আয়কর ও শুল্ক ক্যাডারের কর্মকর্তারা বলছেন, পৃথিবীর সব দেশের নিজস্ব রাজস্ব আদায়কারী সংস্থা রয়েছে। অথচ কোনো ধরনের সমীক্ষা ছাড়াই এনবিআর বিলুপ্ত করতে অধ্যাদেশ চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এ সিদ্ধান্তের ফলে অংশীজন বা ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়বে তা নিয়ে কোনো আলোচনাই করা হয়নি। একটি বিশেষ ক্যাডার নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে একতরফা ভাবে খসড়া অধ্যাদেশ তৈরি করেছে। এ ক্ষেত্রে কাস্টমস ও আয়কর ক্যাডারের মতামত তো দূরের কথা, অর্থনৈতিক পরিস্থিতিবিষয়ক শ্বেতপত্র কমিটি বা এনবিআর সংস্কারবিষয়ক পরামর্শক কমিটির সুপারিশ আমলে নেওয়া হয়নি। খসড়া অধ্যাদেশে নানা রকমের অসংগতি আছে। এসব ত্রুটি-বিচ্যুতি চিহ্নিত না করে এবং সমীক্ষা ছাড়া এনবিআর বিলুপ্ত করলে রাজস্ব আদায় কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হবে। এতে দেশের অর্থনীতি ধসে পড়তে পারে।

তৃতীয় দিনের মতো কলম বিরতি চলছে। বরিশাল কর অঞ্চল। ছবি: আজকের পত্রিকা

এনবিআর কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বলছেন, তাঁরা এনবিআর তথা রাজস্ব প্রশাসন সংস্কারের বিরোধী নন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কারের দাবি দীর্ঘদিন ধরে করে আসছে। তাঁরা চান, এই সংস্কার যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য হবে, দেশের স্বার্থ ও উন্নয়নধর্মী দর্শন এতে প্রতিফলিত হবে। রাজস্ব প্রশাসন অধিকতর কার্যকর, প্রগতিশীল ও দুর্নীতিমুক্ত হবে। সংস্কার কোনো গোষ্ঠীগত কায়েমি স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হবে না।

১৯৯৩ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) এনবিআরকে নীতি ও প্রশাসন বিভাগে বিভক্ত করতে পরামর্শ দিয়েছিল। ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিশ্বব্যাংকও চাপ দিয়েছিল। কিন্তু তখন তা বেশি দূর এগোয়নি।

এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের হাল ধরা অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যবস্থা সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। এরই অংশ হিসেবে এনবিআর সংস্কারে পাঁচ সদস্যের একটি পরামর্শক কমিটি গঠন করে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি)।

এতে প্রশাসন ক্যাডার থেকে আসা এনবিআরের সাবেক দুই চেয়ারম্যান, শুল্ক ও আয়কর ক্যাডার থেকে আসা রাজস্ব নীতি প্রণয়ন ও আদায় বিভাগের দুইজন সাবেক সদস্যকে এ কমিটিতে রাখা হয়।

গত ডিসেম্বরে ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা’ নামে আলাদা বিভাগ করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে এ কমিটি অর্থ উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত