চীনের সঙ্গে একটি ন্যায্য বাণিজ্য চুক্তি চায় যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান খোদ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে চীনসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে। চীনের সঙ্গে আলোচনার প্রধান লক্ষ্য হলো—একটি ন্যায্য চুক্তিতে পৌঁছানো। চলতি সপ্তাহেই এ সংক্রান্ত ঘোষণা আসতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি। তবে, বিস্তারিত কোনো তথ্য দেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা চলমান থাকলেও দুই দেশের প্রেসিডেন্টের এ সপ্তাহে কোনো বৈঠক করার পরিকল্পনা নেই।
উল্লেখ্য, গত ২ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সব আমদানি পণ্যে ১০ শতাংশ বেসলাইন শুল্ক এবং বেশ কিছু দেশের রপ্তানি পণ্যে উচ্চ হারে শুল্ক নির্ধারণ করেন। পরবর্তীতে অতিরিক্ত শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়। ট্রাম্প চীন, কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর যথাক্রমে ১৪৫ শতাংশ, ২৫ শতাংশ এবং ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করেছেন। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, কিছু দেশের সঙ্গে হয়তো চুক্তি সম্ভব হবে না, বরং তাদের জন্য একটি নির্দিষ্ট হারে শুল্ক আরোপ করা হতে পারে।
চীনকে ঘিরে ট্রাম্প তাঁর দীর্ঘদিনের অবস্থান পুনরায় ব্যক্ত করে বলেন, চীন বহু বছর ধরে বৈশ্বিক বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতি করে আসছে। চীনের সঙ্গে সাবেক প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনকে তিনি ইতিহাসের সবচেয়ে ক্ষতিকর পদক্ষেপগুলোর একটি হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
তবে এনবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে চীন ইস্যুতে কিছুটা নমনীয় কথা বলেছেন ট্রাম্প। তিনি জানান, তাঁর প্রশাসন চীনের বিরুদ্ধে কঠোর নীতি গ্রহণ করায় বর্তমানে দেশটির সঙ্গে কার্যত বাণিজ্য স্থগিত রয়েছে, কিন্তু বেইজিং এখন একটি চুক্তি করতে আগ্রহ প্রকাশ করছে। ন্যায্য হলে সেই চুক্তিতে সম্মত হতে ওয়াশিংটনের কোনো আপত্তি নেই।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা কার্যত চীনের সঙ্গে ব্যবসা বন্ধ রেখেছি, এর ফলে দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা ট্রিলিয়ন ডলারের ক্ষতি থেকে আপাতত বাঁচা যাচ্ছে। এখন চীন খুবই আগ্রহী হয়ে একটি চুক্তিতে আসতে চাচ্ছে। আমরা আলোচনা করছি। ফলাফল কী দাঁড়ায় তা বিবেচনা করা হবে। যদি সব ঠিক থাকে তাহলে চুক্তি হতে পারে। তবে সেটি অবশ্যই একটি ন্যায্য ও গ্রহণযোগ্য চুক্তি হতে হবে।’
বিশ্লেষকদের মতে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি মূলত তাঁর ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ দর্শনেরই অংশ, যেখানে তিনি মনে করেন বেইজিং-ওয়াশিংটন বাণিজ্য যুক্তরাষ্ট্রের জন্য মূলত ক্ষতিকর। উচ্চ শুল্ক আরোপ করে তিনি চীনের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন, যাতে চীন আরও ন্যায্য ও সমতা ভিত্তিক বাণিজ্য চুক্তিতে রাজি হয়। এরই মধ্যে এই পদক্ষেপের ভুক্তভোগী হয়েছে বিশ্ববাজার। এখন তিনি চীনের সঙ্গে চুক্তির আশাবাদ ব্যক্ত করলেও, এটি তাঁর একটি রাজনৈতিক কৌশলও হতে পারে বলে সন্দেহ করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ।