দেশের ভোজ্যতেলের বাজারে এখনো মানের ঘাটতি রয়েছে। ভিটামিন ‘এ’ ও ‘ডি’ সমৃদ্ধ তেল সরবরাহ বাধ্যতামূলক হলেও বাস্তবে তা অনেকটা উপেক্ষিত। সরকারি আইন অনুযায়ী তেলে ভিটামিন এ মেশানো আবশ্যক হলেও বাজারের বিশাল একটি অংশে তা অনুপস্থিত কিংবা থাকলেও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। একইভাবে ভিটামিন ডি-এর অভাব উদ্বেগজনক পর্যায়ে, যা শিশুদের হাড়ের সঠিক গঠন ও বড়দের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা তৈরিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবু পুষ্টি বাদ, খরচ কম ফর্মুলায় চলছে ভোজ্যতেলের খোলাবাজার।
গবেষণা বলছে, দেশের বাজারে বিক্রি হওয়া ভোজ্যতেলের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ এখনো খোলা ড্রামে বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে ৫৯ শতাংশ তেলে কোনো ভিটামিন এ নেই, আর ৩৪ শতাংশে রয়েছে প্রয়োজনের তুলনায় কম। শুধু তা-ই নয়, এসব তেল পরিবহনের জন্য যে ড্রাম ব্যবহার করা হয়, সেগুলোর একটি বড় অংশ একসময় কেমিক্যাল, লুব্রিকেন্ট বা অন্যান্য শিল্পজাত দ্রব্য বহনে ব্যবহৃত হয়েছিল; যা তেলের মান ও স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তোলে।
গতকাল রাজধানীর বিআইপি কনফারেন্স হলে আয়োজিত ‘সবার জন্য ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল: অগ্রগতি, বাধা ও করণীয়’ শীর্ষক সাংবাদিক কর্মশালায় এসব তথ্য তুলে ধরেন বিশেষজ্ঞরা। যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করে গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ।
আলোচনায় অংশ নেন বিএসটিআইয়ের উপপরিচালক এস এম আবু সাঈদ, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের অধ্যাপক সোহেল রেজা চৌধুরী, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মুশতাক হাসান মুহ. ইফতিখার, ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথের আবু আহমেদ শামীম, বাংলাদেশ ফার্স্টের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোর্শেদ নোমান ও প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়ের। উপস্থাপনা করেন ডা. রীনা রাণী পাল ও হাসান শাহরিয়ার।
কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরা বলেন, ২০১৩ সালে দেশে ভিটামিন এ সমৃদ্ধকরণ আইন প্রণয়ন করা হয় এবং ২০২২ সালে খোলা সয়াবিন ও পাম তেল বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে শিল্প মন্ত্রণালয়। কিন্তু বাস্তবতায় এসব নির্দেশনার কার্যকর প্রয়োগ হয়নি বলে অভিযোগ উঠছে। ফলে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে বিএসটিআই, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এ অবস্থায় ভিটামিন এ ও ডি-এর ঘাটতির প্রভাব পড়ছে স্বাস্থ্য খাতে। শিশুদের মধ্যে চোখের সমস্যা, রিকেটস ও হাড়ের দুর্বলতা বাড়ছে। বড়দের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগসহ নানা অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ছে। অথচ পুষ্টির ঘাটতি মোকাবিলায় ভিটামিনযুক্ত তেল হতে পারে একটি সহজ, কার্যকর ও সাশ্রয়ী মাধ্যম; যা সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হলে দীর্ঘ মেয়াদে জাতিগত স্বাস্থ্য উন্নয়নের পথ সুগম হবে।