আরও এক ঘণ্টা বাড়িয়ে আগামীকাল রোববার ৬ ঘণ্টা কলম বিরতির ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ওই দিন পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে দুপুর ১২টায়।
আজ শনিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত কলম বিরতি পালনের পর সংবাদ সম্মেলনে এসব ঘোষণা দেয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন এনবিআরের অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান, উপ কমিশনার নিপুণ চাকমা প্রমুখ।
আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি হলো আগামীকাল রোববার সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টা কলম বিরতি চলবে। পূর্বের মতোই আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা, রপ্তানি এবং জাতীয় বাজেট প্রণয়ন কার্যক্রম এই কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগামীকালের প্রেস ব্রিফিং দুপুর ১২টায় অনুষ্ঠিত হবে। ওই ব্রিফিংয়ে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
গত সোমবার (১২ মে) মধ্যরাতে এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি বিভাগ করার বিষয়ে অধ্যাদেশ জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ১৭ এপ্রিল উপদেষ্টা পরিষদে খসড়া অনুমোদনের ২৫ দিন পর এই অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
অধ্যাদেশের খসড়াতেই আপত্তি জানিয়ে এটি বাতিলের দাবি তোলেন আয়কর ও শুল্ক ক্যাডারের সদস্যদের সমিতি। ক্যাডার সার্ভিসের বাইরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও এই দাবির পক্ষে এক জোট হন।
তবে শুরুতে কর্মকর্তাদের দাবির পক্ষে অনড় থাকলেও পরে দুই সমিতির শীর্ষ নেতারা পিছু হটেন। আর এতে সমিতির পদে থাকা অনেক কর্মকর্তা গত বুধবার পদত্যাগ করেন। অধ্যাদেশ বাতিল করে সবার মতামত নিয়ে নতুন করে অধ্যাদেশ জারির দাবিতে ঐক্য পরিষদের ব্যানারে গত বুধবার থেকে কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন এনবিআর কর্মকর্তারা-কর্মচারীরা।
সংবাদ সম্মেলনে কর্মকর্তারা বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কারের দাবি দীর্ঘদিন ধরে করে আসছেন। সংস্কারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন হওয়া সত্ত্বেও কাস্টমস ও ট্যাক্স সার্ভিসের হাজার-হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতামত গ্রহণ না করে ও সরকার কর্তৃক গঠিত সংস্কার কমিটির সুপারিশ প্রকাশ না করে এবং তা আলোচনা-পর্যালোচনার সুযোগ না রেখে জারীকৃত অধ্যাদেশের মাধ্যমে যে সংস্কারের প্রস্তাব করা হয়েছে তা দেশের রাজস্ব ব্যবস্থায় বিপর্যয় সৃষ্টি করবে বলে ঐক্য পরিষদ মনে করে।
সংবাদ সম্মেলনে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘একটা কথা আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই, আমরা সংস্কারের পক্ষে, আমরা সংস্কার চাই। রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা পৃথক হোক, এ বিষয়েও আমরা একমত। এ বিষয়ে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। তবে, এই সংস্কার হতে হবে বাস্তবমুখী, অংশীজনের মতামতভিত্তিক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার সর্বোচ্চ মূল্যায়নের মাধ্যমে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আরও জানাতে চাই, আমাদের এই আন্দোলন বরাবরই একটি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন। গতকাল কতিপয় বহিরাগত অনুপ্রবেশ করানোর মাধ্যমে আমাদের আন্দোলনে বিশৃংখলা সৃষ্টির অপচেষ্টাকে তীব্র নিন্দা জানাই।’
আসাদুজ্জামান বলেন, ‘সরকারের সাথে আলোচনা করে আমরা এই অচলাবস্থার নিরসন চাই। আমরা আশা করছি, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার সানুগ্রহ নির্দেশনায় সরকার আমাদের সাথে আলোচনার জন্য বসবেন এবং কোনো মিডিয়া মারফত আমরা আলোচনার খবর পাব। আমরা দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই, আলোচনার দরজা আমাদের পক্ষ থেকে সবসময়ই খোলা ছিল, আছে এবং থাকবে।’
নিপুণ চাকমা বলেন, ‘আপনারা জানেন, সাধারণ সদস্যগণের মতামতের ভিত্তিতে বিসিএস (ট্যাক্সেশন) অ্যাসোসিয়েশনের অনির্বাচিত নির্বাহী কমিটিকে অবৈধ ও বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। অপরদিকে, বিসিএস কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটির প্রায় সকল সদস্য পদত্যাগ করায় এটিও অকার্যকর হয়ে পড়েছে। সুতরাং, এই দুই অ্যাসোসিয়েশন এখন আর এই দুই ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তাগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। এমতাবস্থায়, বিলুপ্ত ও অকার্যকর এই দুই কমিটির নামে যে কোনো বক্তৃতা, বিবৃতি ব্যক্তিগত বলে গণ্য হবে।’