বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ কংগ্রেসে সময়মতো হাজির না হয়ে চরম সমালোচনার মুখে পড়লেন ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো। প্যারাগুয়ের লুকুয়েতে অনুষ্ঠিত ফিফা কংগ্রেসে নির্ধারিত সময়ের দুই ঘণ্টা ১৭ মিনিট পর উপস্থিত হন ইনফান্তিনো, যার প্রতিবাদে ইউরোপীয় ফুটবল সংস্থা উয়েফা এবং কিছু কনকাকাফ প্রতিনিধি অনুষ্ঠান থেকে ওয়াকআউট করেন।
ইনফান্তিনোর এই বিলম্বিত আগমনের পেছনে কারণ হিসেবে জানানো হয়, তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে একটি কূটনৈতিক সফরে ছিলেন। ফিফা সভাপতির দাবি, এই সফর ‘বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতির’ গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় ফুটবলের প্রতিনিধিত্বের সুযোগ করে দিয়েছে তাঁকে।
তবে উয়েফার মতে, এটি ছিল ‘ব্যক্তিগত রাজনৈতিক স্বার্থ’কে গুরুত্ব দেওয়ার স্পষ্ট উদাহরণ, যা ফুটবলের মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করেছে। ইউরোপীয় ফুটবল সংস্থার সভাপতি আলেকসান্ডার চেফারিন নেতৃত্ব দেন সেই ওয়াকআউটের, যার সঙ্গে ছিলেন ইংল্যান্ড ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ার ডেবি হিউইটসহ একাধিক ইউরোপীয় প্রতিনিধি।
উয়েফার বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ফিফা কংগ্রেস হলো এমন একটি সম্মেলন যেখানে ২১১টি দেশের প্রতিনিধিরা বিশ্ব ফুটবলের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা করেন। শেষ মুহূর্তে সময়সূচি পরিবর্তন এবং রাজনৈতিক স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া ফুটবলের জন্য মোটেও ইতিবাচক বার্তা বহন করে না।’
তারা আরও যোগ করে, ‘আমরা সবাই ফুটবলের সেবা দিতে এখানে আছি—রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে বিশ্বমঞ্চ পর্যন্ত। তাই এই প্রতিবাদে ওয়াকআউটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যাতে এটা স্পষ্ট হয় যে ফুটবলই আমাদের সবার প্রথম অগ্রাধিকার।’
নরওয়ের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট লিস ক্লাভেনেস বলেন, ‘এই বার্ষিক কংগ্রেস আন্তর্জাতিক ফুটবলে সুশাসন নিশ্চিত করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম। শত শত প্রতিনিধি বিশ্বজুড়ে থেকে এখানে এসেছেন, একটি পেশাদার নেতৃত্ব এবং উচ্চমানের সংলাপ প্রত্যাশায়। এই পরিস্থিতি আমাদের জন্য গভীর উদ্বেগের।’
এদিকে, কনকাকাফের বেশ কিছু প্রতিনিধি ও দেশও কংগ্রেস থেকে আগেভাগেই বেরিয়ে যান, যা পুরো সম্মেলনের পরিবেশকে অনেকটাই ভারসাম্যহীন করে তোলে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে ফিফার সেক্রেটারি জেনারেল ম্যাথিয়াস গ্রাফস্ট্রম জানান, ‘ফিফার সঙ্গে উয়েফা ও ইউরোপীয় সদস্যদের সম্পর্ক খুবই ভালো। প্রেসিডেন্ট ইনফান্তিনো কেন দেরি করলেন, সে বিষয়ে তিনি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আমরা এখানে একটি সফল কংগ্রেস আয়োজন করেছি।’
তবে কংগ্রেসের গঠনমূলক আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরিবর্তে এমন নাটকীয় ঘটনায় বিশ্ব ফুটবলের নেতৃত্বের ওপর আবারও প্রশ্ন উঠেছে—ফুটবলের আসল খেলা কি মাঠে, না মঞ্চে?