সিলেট টেস্ট হেরে মুখ নিচু ছিল বাংলাদেশ। চারপাশে প্রশ্ন—এই দল কি আর আগের মতো ধারালো? কিন্তু চট্টগ্রামে এসে সব জবাব একাই দিলেন একজন—মেহেদী হাসান মিরাজ। ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত অলরাউন্ড নৈপুণ্যে জিম্বাবুয়েকে যেন টর্নেডোর মতো উড়িয়ে দিয়ে ম্যাচ জেতালেন ইনিংস ও ১০৬ রানে। সিরিজও শেষ হলো সমতায়।
প্রথম ইনিংসে ১০৪ রানের অনবদ্য ইনিংস। এরপর বল হাতে দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট। শুধু ম্যাচ জেতাননি, টেস্ট ক্যারিয়ারে ২০০০ রান ও ২০০ উইকেটের ডাবল পূরণ করে পৌঁছে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। সাকিব আল হাসানকেও ছাড়িয়ে গেছেন ম্যাচ সংখ্যার দিক থেকে—৫৩ টেস্টে এই কীর্তি গড়েছেন মিরাজ, যেখানে সাকিবের লেগেছিল ৫৪টি।
চট্টগ্রামের টেস্টে প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়ে ব্যাট করে তোলে ২২৭ রান। ওপেনিংয়ে কিছুটা প্রতিরোধ এলেও এরপর তাইজুল-নাইমদের ঘূর্ণিতে তাদের ইনিংস দ্রুত গুটিয়ে যায়। এরপর বাংলাদেশ ব্যাট হাতে সাদমান ইসলামের ১২০, মিরাজের ১০৪ এবং তানজিম সাকিবের কার্যকর ৪১ রানের ইনিংসে বিশাল স্কোর তোলে বাংলাদেশ—৪৪৪। ২১৭ রানের বিশাল লিড দাঁড়ায়।
২১৭ রানে পিছিয়ে থেকে জিম্বাবুয়ের শুরুটা হয় দুঃস্বপ্নের মতো। মাত্র ২২ রানে ৩ উইকেট হারায় তারা। এরপর প্রতিরোধ শুরু করে বেন কারান ও অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন। একটা পর্যায়ে মনে হচ্ছিল দ্বিতীয় ইনিংসে জিম্বাবুয়ে কিছুটা প্রতিরোধ গড়তে পারে। ওপেনার বেন কারান করেন ৪৬ রান, অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন খেলেন ২৫ রানের লড়াকু ইনিংস। কিন্তু বাকিরা ছিলেন যেন হাঁসফাঁস করা যাত্রী।
এবারও সেই মিরাজ। মিরাজের ঘূর্ণিতে ৪ জন ব্যাটার আউট হন সিঙ্গেল ডিজিটে, কেউ দাঁড়াতেই পারেননি। উইকেটের পেছনে ধারাবাহিক চাপ আর মিরাজের নিখুঁত লাইন-লেংথ জিম্বাবুয়েকে কাঁপিয়ে দেয়। শেষ পর্যন্ত তারা গুটিয়ে যায় মাত্র ১১১ রানে, ৪৬.২ ওভারে। আর শতকের পর মিরাজ নেন ফাইফার।
ম্যাচ সারসংক্ষেপ:
- বাংলাদেশ: ৪৪৪
- জিম্বাবুয়ে: ২২৭ ও ১১১
- ফলাফল: বাংলাদেশ জয়ী ইনিংস ও ১০৬ রানে
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মেহেদী হাসান মিরাজ (১০৪ রান ও ৫ উইকেট)
এই টেস্ট জয়ে শুধু সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়া থেকে বাঁচলো না, বরং স্পষ্ট বার্তাও দিল—দলে এখন এমন একজন আছে, যিনি চাপের মাঝেও ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারেন। সাকিবের উত্তরসূরি হিসেবে মিরাজ দিনকে দিন আরও প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা—মিরাজ কি হয়ে উঠবেন বাংলাদেশের পরবর্তী বিশ্বমানের অলরাউন্ডার?