Homeজাতীয়এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন, নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা

এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন, নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা


মানবিক সহায়তা পাঠানোর জন্য মিয়ানমারের রাখাইনের সঙ্গে ‘করিডর’ বা ‘প্যাসেজ’ চালুর বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ‘নীতিগত সিদ্ধান্ত’ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

রাজনৈতিক দলগুলো এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় কোন আইনের আওতায় করিডর করা হচ্ছে, এটা দীর্ঘমেয়াদি জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা কী হবে, সেসব বিষয়ে প্রশ্ন তুলছেন কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক। বিষয়টি জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত থাকায় রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কর্তৃপক্ষ এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারে, এমন সম্ভাবনাও আছে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে।

বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে রাখাইনে মানবিক সহায়তা দিতে করিডরের বিষয়ে সরকারের ‘নীতিগত সম্মতির’ কথা পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন রোববার সাংবাদিকদের জানান। এরপর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম মঙ্গলবার দাবি করেন, সরকার জাতিসংঘ বা অন্য কারও সঙ্গে মানবিক করিডর নিয়ে আলোচনা করেনি। আর রাখাইনে জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন মানবিক সহায়তা দেওয়া হলে বাংলাদেশ লজিস্টিক সহায়তা দিতে ইচ্ছুক।

এ বিষয়ে ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির একজন মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মানবিক সহায়তা পাঠানোর আগে উভয় দেশের সরকারে সম্মতি প্রয়োজন।

বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ অনেক রাজনৈতিক দল এরই মধ্যে করিডরের বিষয়ে সরকারের প্রতি সতর্কবার্তা দিয়েছে।

বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল গতকাল বুধবার বলেছেন, করিডর দেওয়া বা না দেওয়া রাষ্ট্রের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়।

এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। কারণ, সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। জনগণ ও সংসদের কাছে সরকারের জবাবদিহি নেই। ঢাকায় সুপ্রিম কোর্ট অ্যানেক্স ভবনের সামনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ (বিআইপিএসএস) ফেসবুক পেজে ‘রাখাইনে মানবিক করিডরের কৌশলগত ও আইনি চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক বিশ্লেষণ তুলে ধরেছে। বিআইপিএসএস প্রেসিডেন্ট ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক এ এন এম মুনিরুজ্জামান বলেছেন, করিডরের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক কোন আইনের তা আওতায় করা হচ্ছে, কীভাবে পরিচালিত হবে, নিরাপত্তাব্যবস্থা কী হবে, আর পুরো বিষয়টি জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে।

সেনাবাহিনীর সাবেক এই মেজর জেনারেল বলেন, রাখাইন একটি সংঘাতপূর্ণ এলাকা। সেখানে কিছু করতে গেলে সংঘাতে জড়িত সব পক্ষের লিখিত সম্মতি থাকতে হবে। মিয়ানমার সরকারের সম্মতি ছাড়া করিডর চালু হলে আন্তর্জাতিক আইনে তা বৈধতা পাবে না। আর তাতে মারাত্মক আইনগত ও কূটনৈতিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক কাঠামো ও রীতিনীতির আওতায় প্রতিষ্ঠিত না হলে প্রভাবশালী বিভিন্ন পক্ষ এমন করিডরের ধারণা ভবিষ্যতে বাংলাদেশে পার্বত্য অঞ্চলের ক্ষেত্রেও প্রয়োগের দাবি তুলতে পারে।

জাতিসংঘের মাধ্যমে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে রাখাইনে সহায়তা পাঠানো প্রসঙ্গে এ এন এম মুনিরুজ্জামান বলেন, জাতিসংঘও আইনের ঊর্ধ্বে নয়। এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত দরকার হতে পারে।

বিআইপিএসএস বলছে, সংসদীয় প্রক্রিয়া ও নজরদারি ছাড়া আন্তসীমান্ত সহায়তা চালু হলে তা পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এড়িয়ে যাওয়ার মতো বিপজ্জনক নজির হবে। সার্বভৌম কর্তৃপক্ষ হিসেবে রাখাইনের অরাষ্ট্রীয় সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির স্বীকৃতি না থাকায় তা করিডরের ক্ষেত্রে অবিশ্বস্ত অংশীদার হিসেবে গণ্য হয়। এ ছাড়া এ বাহিনী বাংলাদেশ সীমান্তে যে আচরণ করছে, তাতে তা সীমান্ত এলাকায় অস্থিতিশীলতা ও জাতীয় সার্বভৌমত্বের দিক থেকে তারা ঝুঁকি হয়ে দেখা দিতে পারে। করিডর হয়ে মিয়ানমার থেকে অস্ত্র, মাদক ও মানব পাচারের মতো ঝুঁকিও দেখা দিতে পারে।

করিডরের ধারণা বাস্তবায়ন করতে গেলে রাখাইনের অরাষ্ট্রীয় সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সহযোগিতা দরকার হবে। বাংলাদেশ এর আগে কখনো অন্য দেশের অরাষ্ট্রীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হয়নি, এটা উল্লেখ করে কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবীর বলেন, আরাকান আর্মির সঙ্গে কোনো একটি ব্যবস্থায় যুক্ত হলে তা হবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে একটি বড় ধরনের নীতিগত পরিবর্তন। তিনি বলেন, এ করিডরের বিনিময়ে বাংলাদেশ কী পাবে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এমন করিডর তৈরি ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যে কূটনৈতিক দক্ষতা থাকতে হয়, তা আছে কি না, দেশের ভেতরকার বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয় আছে কি না—এগুলোও বড় প্রশ্ন।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, করিডরের ধারণাটি রাখাইনের মানুষকে মানবিক সহায়তা দেওয়ার জন্য। বিষয়টি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সেখানে ফেরত পাঠানোর সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত নয়। এ দুটি বিষয়কে কীভাবে যুক্ত করা হবে, সেটাও দেখার বিষয়। পুরো বিষয়টি স্পর্শকাতর, এমনটা উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক, নিরাপত্তা, কূটনৈতিক, আইনসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের যুক্ত হওয়া দরকার হবে।

কূটনৈতিক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, রাখাইনের সঙ্গে করিডরে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি পশ্চিমা দেশের বেশ আগ্রহ আছে। রাখাইনের ভূরাজনৈতিক জটিলতার মধ্যে এ অঞ্চলে চীন, ভারত, জাপানের পাশাপাশি রাশিয়ারও আগ্রহ থাকায় করিডর চালুর সিদ্ধান্ত একতরফা হলে এই দেশগুলো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সভায় গতকাল নেওয়া এক প্রস্তাবে বলা হয়, করিডরের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে সরকারের একক ও অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদসহ সাম্রাজ্যবাদী-আধিপত্যবাদী শক্তিগুলোর যুদ্ধ চক্রান্তের শিকার হতে পারে।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত