Homeজাতীয়গণ-অভ্যুত্থানে হতাহতদের পুনর্বাসনে হচ্ছে অধ্যাদেশ

গণ-অভ্যুত্থানে হতাহতদের পুনর্বাসনে হচ্ছে অধ্যাদেশ


জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারকে আর্থিক সুবিধা প্রদান এবং আহত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনে অন্তর্বর্তী সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, সেগুলোকে আইনি কাঠামোর মধ্যে আনতে অধ্যাদেশ হচ্ছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তরকে এই আইনের আওতায় আনা হবে। এই অধিদপ্তরের মাধ্যমেই শহীদদের পরিবারকে আর্থিক সুবিধা, আহত ব্যক্তিদের জন্য সঞ্চয়পত্র ক্রয় ও মাসে মাসে ভাতা দেওয়া, তাঁদের দেশে-বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। তবে সরকারি চাকরিতে তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়ে অধ্যাদেশের খসড়ায় কিছু বলা হয়নি।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্যদের কল্যাণ এবং আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে একটি নীতিমালার খসড়া করেছিল মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। কিন্তু ওই খসড়া অনুমোদন না দিয়ে আইনি কাঠামোর মধ্যে গণ-অভ্যুত্থানে হতাহত ব্যক্তিদের আর্থিক সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। পরে তড়িঘড়ি করে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত ছাত্র-জনতার কল্যাণ ও পুনর্বাসন’ অধ্যাদেশের খসড়া করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আন্তমন্ত্রণালয় কমিটিতে গতকাল রোববার খসড়াটি পর্যালোচনা করা হয়েছে। অনুমোদনের জন্য শিগগিরই এটি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উত্থাপন করা হবে।

অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাস সংরক্ষণ, নিহতদের পরিবার ও আহতদের পুনর্বাসন এবং গণ-অভ্যুত্থানের আদর্শকে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর গঠন করা হবে। যদিও গত ১২ এপ্রিল এই অধিদপ্তর গঠন করেছে সরকার।

গণ-অভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবারের পাশাপাশি আহতদেরও ধরনভেদে কীভাবে আর্থিক সুবিধা দেওয়া হবে, সে বিষয়ে অধ্যাদেশের খসড়ায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আহতদের দেশে-বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়টিও এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া নিহতদের পরিবার ও আহতদের সঞ্চয়পত্র কিনে দেওয়া এবং মাসে মাসে ভাতা দেওয়ার বিষয়গুলোও অধ্যাদেশে রাখা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রথমে সিদ্ধান্ত ছিল নীতিমালার মাধ্যমেই গণ-অভ্যুত্থানে হতাহতদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে যারাই ক্ষমতায় আসুক না কেন, অভ্যুত্থানে হতাহতদের সুযোগ-সুবিধা যাতে বন্ধ করতে না পারে, সে জন্য এসব বিষয়কে আইনি কাঠামোতে আনতে নতুন অধ্যাদেশ করার সিদ্ধান্ত হয়।

গণ-অভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবারের সদস্য ও আহতদের সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়ে অধ্যাদেশের খসড়ায় কিছু বলা হয়নি। এ বিষয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, অধ্যাদেশে তাঁদের পুনর্বাসনের কথা বলা আছে। কীভাবে তা করা হবে, সরকার সে বিষয়ে আলাদা গাইডলাইন জারি করতে পারে। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, সমাজসেবা অধিদপ্তর, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মতো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সহজেই তাঁদের পুনর্বাসন করা যাবে। তবে এ বিষয়ে আন্তমন্ত্রণালয় সভায় সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

উল্লেখ্য, গণ-অভ্যুত্থানে প্রত্যেক শহীদের পরিবারকে ৩০ লাখ এবং চার শ্রেণির আহতদের ১ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনে দেওয়া হচ্ছে। সঞ্চয়পত্র কিনে দেওয়া শেষ হলে আগামী জুলাই থেকে তাঁদের মাসিক ভাতা দেওয়া শুরু হবে।

গণ-অভ্যুত্থানে নিহত ব্যক্তি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম হলে ওই পরিবারকে এবং অতিগুরুতর আহত ব্যক্তিদের মাসে অর্থসহায়তা দেওয়া হবে। এর বাইরে শহীদ পরিবারের সন্তানদের শিক্ষাসহায়তা এবং আহত ব্যক্তিদের সারাজীবন বিনা মূল্যে চিকিৎসা ছাড়াও শিক্ষাগত যোগ্যতা ও শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী কর্মসংস্থান এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান শাখার যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ ফারুক হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, অভ্যুত্থানে হতাহতদের যত ধরনের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে এবং তাঁদের পুনর্বাসনের বিষয়গুলোকে আইনি কাঠামোর মধ্যে আনতে নতুন অধ্যাদেশ করা হচ্ছে।

বদলে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা

মুক্তিযুদ্ধ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা বদলাতে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) আইন সংশোধন করতে যাচ্ছে সরকার। এই সংজ্ঞা বদলে গেলে মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামও বাদ পড়তে পারে। মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা পরিবর্তন করে যাঁরা সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেননি, তাঁদের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগী হিসেবে রাখা হবে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে আগামীকাল মঙ্গলবার উপদেষ্টা পরিষদের সভায় জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উত্থাপনের কথা রয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধার বর্তমান সংজ্ঞায় সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেননি এমন আট ধরনের ব্যক্তি ও পেশাজীবীর বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া আছে। নতুন সংজ্ঞায় যাঁরা বিদেশে থেকে যুদ্ধের জনমত গঠন করেছেন, মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারী-দূত; মুজিবনগর সরকারে সম্পৃক্ত এমএনএ এবং যাঁরা পরবর্তী সময়ে গণপরিষদের সদস্য হিসেবে গণ্য হয়েছিলেন, স্বাধীন বাংলা বেতর কেন্দ্রের শিল্পী ও কলাকুশলী এবং দেশ ও দেশের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দায়িত্ব পালনকারী বাংলাদেশি সাংবাদিক এবং স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সব খেলোয়াড়কে মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী হিসেবে রাখা হয়েছে।

খসড়ায় মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞা থেকেও শেখ মুজিবুর রহমানের নাম বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের নতুন সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মার্চ হইতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষায় হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী এবং তাহাদের সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস, মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ।’

ভোটার, যোগাযোগ সুবিধা দেখে সীমানা পুনর্নির্ধারণ

জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণে আইন সংশোধন করতে যাচ্ছে সরকার। আগামীকালের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ-সংক্রান্ত অধ্যাদেশ অনুমোদনের জন্য তোলার কথা রয়েছে।

খসড়া অনুযায়ী, জনসংখ্যার পাশাপাশি ভোটার সংখ্যা, ভৌগোলিক ও জাতিগত বৈশিষ্ট্য এবং যোগাযোগ সুবিধা দেখে সীমানা নির্ধারণ করা হবে। তবে ইউনিয়ন এবং সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার ওয়ার্ডকে কোনোভাবেই ভাগ করা হবে না।

২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনের জন্য এ টি এম শামসুল হুদার কমিশন শতাধিক নির্বাচনী এলাকার সীমানায় পরিবর্তন আনে। এরপর কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ কমিশন দশম সংসদ নির্বাচনে ৫০টি আসনে ছোটখাটো পরিবর্তন আনে। কে এম নূরুল হুদা কমিশন ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২৫টি আসনে এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কাজী হাবিবুল আউয়ালের কমিশন ১২টি আসনের সীমানায় সামান্য পরিবর্তন আনে। তার আগে ১৯৮৪ ও ১৯৯১ সালে ৩৩টি নির্বাচনী এলাকার সীমানায় পরিবর্তন করা হয়।

কৃষিপণ্য হচ্ছে তুলা

তুলার উৎপাদন বাড়াতে দেশে উৎপাদিত তুলাকে কৃষিপণ্যের স্বীকৃতি দিচ্ছে সরকার। মঙ্গলবারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে দেশে উৎপাদিত আঁশ তুলাকে কৃষিপণ্য ঘোষণার প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করবে কৃষি মন্ত্রণালয়।

তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, ২০৫০ সালের মধ্যে দেশে ২ লাখ হেক্টর জমিতে তুলা উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়েছে সরকার। এতে দেশের চাহিদার ২০ শতাংশ তুলা উৎপাদন সম্ভব হবে। এ জন্য সরকার খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত না করে চরাঞ্চল, বরেন্দ্র এলাকা, পার্বত্য এলাকা ও দেশের বিভিন্ন এলাকার ফলবাগানকে তুলা চাষের আওতায় আনতে চায়।

তুলা চাষের আওতা বাড়াতে গেলে চাষিদের সুবিধা দিতে হবে। এ জন্যই তুলাকে কৃষিপণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হচ্ছে। তুলাকে কৃষিপণ্য ঘোষণা করা হলে তুলা উৎপাদনকারীদের বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দিতে পারবে সরকার। এর আগে ২০১৬ সালের ৬ মার্চ পাটকে কৃষিপণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

মঙ্গলবারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে বাংলাদেশ এনার্জি পোর্ট লিমিটেড নামক কোম্পানি গঠনের বিষয়ে গঠিত কমিটিসহ কোম্পানি গঠনের প্রস্তাব বাতিলের বিষয়টি ওঠার কথা রয়েছে। এ ছাড়া প্রত্নসম্পদ অধ্যাদেশ, বঙ্গবন্ধু ক্রীড়াসেবী কল্যাণ ফাউন্ডেশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ এবং জাতীয় যুব উন্নয়ন নীতিমালা, জাতীয় জীন ব্যাংক ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালার খসড়াও অনুমোদনের জন্য উত্থাপনের কথা রয়েছে।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত