বন্যা ও অন্যান্য
পানির অভাবের পাশাপাশি বন্যাও হজপথে বাধা হয়েছে। ইবনে জাওজি তাঁর আল-মুনতাজাম গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে ৪০১ হিজরি (১০১১ খ্রিষ্টাব্দ) সনে দজলা নদীতে মারাত্মক বন্যা হয়। এই বন্যায় বাগদাদ ও ইরাকের অনেক গ্রাম ও দুর্গ ডুবে যায়, ফলে ইরাক থেকে কেউ হজে যেতে পারেননি। ইবনে আসির (মৃত্যু: ৬৩০ হিজরি) তাঁর আল-কামিল গ্রন্থে এ ঘটনার নিশ্চিতকরণ দিয়ে বলেছেন যে দজলা নদীর পানি ২১ হাত উচ্চতায় পৌঁছে, যা হজের পথে যাত্রাকে অসম্ভব করে তোলে।
এ ছাড়া প্রচণ্ড গরম ও বালুঝড়ও হজের পথে বাধা সৃষ্টি করত। আল-জাযারি (মৃত্যু: ৯৭৭ হিজরি) তাঁর আদ-দুরার আল-ফারাইদ গ্রন্থে ৯৬৬ হিজরি (১৫৫৯ খ্রিষ্টাব্দ) সনের একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন। মিসর থেকে আগত হাজিরা প্রচণ্ড গরম ও বিষাক্ত বাতাসের সম্মুখীন হন। পথের পানি ছিল অপর্যাপ্ত ও দূষিত, যার ফলে অনেক পথচারী ও দরিদ্র হাজি মারা যান।
ফিকহের দৃষ্টিকোণ
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে হজ বন্ধ হওয়া ফিকহের আলোচনায়ও গুরুত্বপূর্ণ স্থান পেয়েছে। হানাফি ফকিহরা পথের নিরাপত্তা এবং সামর্থ্যের শর্ত হিসেবে জল ও খাদ্যের প্রাপ্যতার ওপর জোর দিয়েছেন। ইমাম কাসানি (মৃত্যু: ৫৮৭ হিজরি) তাঁর বাদাইউস সানাই গ্রন্থে বলেছেন যে পথে খাদ্য ও পানির অভাব হজের বাধ্যবাধকতাকে বাতিল করে। মালিকি ফকিহরা, বিশেষ করে আন্দালুস ও মাগরিবের আলেমরা, দীর্ঘ পথে পানির অভাব ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে হজের বাধ্যবাধকতা স্থগিত করার ফতোয়া দিয়েছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, ইবনে রুশদ (জাদ্দ) (মৃত্যু: ৫২০ হিজরি) এবং তুরতুশি (মৃত্যু: ৫২০ হিজরি) আন্দালুস ও মাগরিবের মানুষের জন্য হজকে নিষিদ্ধ বলে ফতোয়া দিয়েছিলেন, কারণ পথের প্রাকৃতিক ঝুঁকি তাঁদের জীবনকে বিপন্ন করত।
আল–জাজিরা ডট নেট অবলম্বনে