কৈশোর বয়সটাই এমন—কিশোরমনে থাকবে প্রাণোচ্ছলতা, সজীবতা আর অন্যরকম উচ্ছ্বাসের আবহ। বয়ঃসন্ধিকালের এ সময়টিতে একজন কিশোর-কিশোরীর জীবনে মানসিক, শারীরিক ও আচরণগত পরিবর্তন ঘটে। এ সময় আবেগ বেশি থাকে এবং বিভিন্ন মানসিক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। কৈশোরবেলা মানবজীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর একটি অধ্যায়। আচরণগত ও আবেগময়তার পরিবর্তনের ফলে অনেক সময় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে কিশোর-কিশোরীরা নিষ্ঠুরতার পথও বেছে নিতে দ্বিধা করে না। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম প্রভাবিত বর্তমান সময়ে কেমন হয় ছোটদের দিনযাপন—এরকমই এক চিত্রনাট্য নিয়ে ওটিটিতে এসেছে ওয়েব সিরিজ ‘অ্যাডোলেসেন্স’। এই সিরিজে বর্তমান প্রেক্ষাপটকে অত্যন্ত সুনিপুণভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ব্রিটিশ ড্রামা ক্রাইম-থ্রিলার এই সিরিজটির চিত্রনাট্য লিখেছেন জ্যাক থর্ন ও স্টিফেন গ্রাহাম। ফিলিপ বারাস্তিনির পরিচালনায় চার পর্বের এই ওয়েব সিরিজে ১৩ বছর বয়সী স্কুলছাত্র জেমি মিলারের ওপর ভিত্তি করে, যাকে একজন মেয়ে সহপাঠী হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। স্কুলে চলা হয়রানির কারণে গভীরভাবে মানসিক বিপর্যস্ত হয়ে পড়া কিশোরের পারিপার্শ্বিক জীবনও ফুটে ওঠে গল্পে। এতে অভিনয় করেছেন গ্রাহাম, এরিন ডোহার্টি, ওয়েন কুপার, ফেই মার্সে, ক্রিস্টিন ট্রেমার্কো, মার্ক স্ট্যানলি, জো হার্টলি ও অ্যামেলি পিস। কোনো ভিডিও কাট ছাড়াই প্রতিটি এপিসোড একটি ধারাবাহিক দৃশ্যে শুট করা হয়।
‘অ্যাডোলেসেন্স’ মুক্তির পর থেকেই ট্রেন্ডিংয়ে শীর্ষে। আলোচনার কেন্দ্রে থাকা এই সিরিজে দেখা যায়, সহপাঠীকে খুনের মামলায় গ্রেপ্তার হয় এক কিশোর। কাহিনি যত সামনে এগোতে থাকে ততই সামাজিক-পারিবারিক দৈন্য ফুটে ওঠে। একজন কিশোরের ভাবনায় মানসিক সমস্যা, অভিভাবকত্বের মতো বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেয়। এর আগেও পর্দায় বহুবার মনোবিদের কাজ দেখানো হয়েছে; তবে ‘অ্যাডোলেসেন্স’-এ একজন মনোবিদের ভাবমূর্তি নতুনভাবে তুলে ধরেছে। অন্যান্য বিনোদনমূলক ছবি বা সিরিজের তুলনায় সিনেমাটি অনেক বেশি বাস্তবমুখী ও শিক্ষণীয়। সংশোধনাগারের অন্দরে কিশোর জেমির সঙ্গে কথোপকথনে মনোবিদের বাস্তব জীবনের দিকটিও দেখা যায়। তার মানসিক অবস্থা, ভাবনা, অভিজ্ঞতা—সবই তীক্ষ্ণভাবে ভেসে ওঠে গল্পে। মনোবিদের সঙ্গে জেমির সংলাপে নানা ‘ফ্যান্টাসি’ দেখা যায়। থেরাপি চলাকালে একজন মনোবিদের মনের ওপরও যে অভিঘাত আসতে পারে, সেটি দেখা গেছে সিরিজে। অন্যান্য সিনেমায় এ দিকগুলো খুবই কম দেখা যায়। কিশোরের দিনযাপনের গল্পে মনোবিদ নিজেই ভেঙে পড়েছেন বা আবেগতাড়িত হয়ে ‘মেন্টাল হেলথ শেমিং’-এ ভোগেন।
ধারাবাহিকটির প্রথম কিস্তি গত মার্চে নেটফ্লিক্সে প্রিমিয়ার আসার পর সমালোচকদের কাছ থেকে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে। এবার তৃতীয় কিস্তি এসেছে। অভিনব শৈলীগত সক্ষমতা ও চমৎকার অভিনয়নৈপুণ্যে সমৃদ্ধ সিরিজটি একটি মাস্টারক্লাস এবং এক তীব্র দর্শন অভিজ্ঞতা, যা হৃদয়ে দাগ কাটে। নিঃসন্দেহে বছরের সবচেয়ে চমকপ্রদ সিনে-সিরিজ, যা পর্দার আবেগকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। কিশোর-কিশোরীরা যদি শারীরিক ও মানসিকভাবে পরিপূর্ণ বেড়ে ওঠে, তাহলেই পাশবিকতা বা বিপথগামিতার পথ থেকে ফিরে সৌহার্দ-সম্প্রীতি আর মায়া-মমতায় ভরে ওঠে তাদের জীবন—‘অ্যাডোলেসেন্সে’র গল্প সেই পথই বাতলানোর চেষ্টা করেছে।