‘হাসির দেশ’ হিসেবে খ্যাত থাইল্যান্ড ছবির মতো সৈকত ও শতাব্দী প্রাচীন মন্দিরের জন্য পরিচিত। সমুদ্রের পাশাপাশি দেশটি ট্রেকিংয়ের জন্যও চমৎকার জায়গা। যারা হাইকিং ভালোবাসেন এবং পৃথিবীর বিভিন্ন ট্রেইলে হাইকিং করে থাকেন, তাঁদের অনন্য অভিজ্ঞতা দেবে থাইল্যান্ডের ট্রেইলগুলো। এসব ট্রেইল ধরে হাঁটার সময় এক ভিন্ন রকম উপকূলীয় সৌন্দর্য এবং থাইল্যান্ডের এক ভিন্ন রকম সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়া যাবে। ঘন জঙ্গল, ধানখেত, কুয়াশাচ্ছন্ন পাহাড় ও পাহাড়ের ওপরের মন্দির যেমন বৈচিত্র্যময়, তেমনি মনোমুগ্ধকর।
যে ছয়টি ট্রেইল বেছে নিতে পারেন,
ডই ইনথানন
ডই ইনথানন থাইল্যান্ডের জাতীয় উদ্যানে অবস্থিত। এটি থাইল্যান্ডের সবচেয়ে উঁচু চূড়া। থাইল্যান্ডের ছাদ নামেও পরিচিত এ জায়গাটি। হাইওয়ে থেকে ঘুরে জাতীয় উদ্যানে প্রবেশের পরপরই প্রথমে জলপ্রপাতের মুখোমুখি হতে হবে। এর পথে আছে ঘন বন, জলপ্রপাত এবং পাহাড়ি কারেন ও হমং জনগোষ্ঠীর গ্রাম। এটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতার জন্য বিখ্যাত। ডই ইনথানন জাতীয় উদ্যানের বৃহত্তম জলপ্রপাতগুলোর মধ্যে একটি ওয়াচিরাথানের খুব কাছেই আছে সিরিথান জলপ্রপাত। তারপর সিরিভূমি জলপ্রপাত। এর পাদদেশে যাওয়ার সংক্ষিপ্ত পথটি মনোরম ফার্নে ভরা সুন্দর পার্কের মধ্য দিয়ে চলে গেছে। সিরিভূমি জলপ্রপাত দুটি ভিন্ন জলপ্রপাত নিয়ে গঠিত। কেউ মে প্যান নেচার ট্রেইলের আশপাশের পথগুলো থেকে সূর্যোদয়ের সময় মেঘের সমুদ্র ভেসে যাওয়ার দৃশ্য দেখা যায়। ট্রেইল রানার ও ফটোগ্রাফারদের কাছে এটি ভীষণ আকাঙ্ক্ষিত।

চিয়াং মাই
উত্তর থাইল্যান্ডের পাহাড়ি সৌন্দর্যে হারিয়ে যাওয়ার জন্য যেতে হবে চিয়াং মাই অঞ্চলে। এটিকে বলা চলে ট্রেইল ধনভান্ডার। এ অঞ্চলে রয়েছে টিক কাঠের বন, সর্পিল নদী ও পাহাড়ি গ্রামে গোপন মন্দির। এ অঞ্চলের জনপ্রিয় পথগুলোর একটি হলো মঙ্ক’স ট্রেইল। মাঝারি ধরনের এই পথটি চলে গেছে স্বর্ণ মন্দির ওয়াট ফ্রা দ্যাট ডই সুতেপের দিকে। এর আরও ভেতরে গেলে থাইল্যান্ডের তৃতীয় সর্বোচ্চ চূড়া ডই পুই বা ডই লুয়াং চিয়াং দাওয়ের দেখা পাওয়া যাবে। এ অঞ্চলের পথগুলো আরও চ্যালেঞ্জিং ও দৃষ্টিনন্দন।

ক্রাবি
আন্দামান সাগরের ঠিক উপকূলে ভাসমান জঙ্গল, চুনাপাথরের পাহাড় এবং মনোরম দ্বীপপুঞ্জে একটি সমৃদ্ধ অঞ্চল ক্রাবি। স্থানীয় সন্ন্যাসীদের ব্যবহৃত বৌদ্ধ মন্দিরগুলো এই শহরের প্রধান আকর্ষণ।
ক্রাবি সাধারণত ছবির মতো সৈকতের জন্য বিখ্যাত। তবে এখানে কিছু আশ্চর্যজনক ট্রেইলও লুকিয়ে আছে। যেমন ড্রাগন ক্রেস্ট ট্রেইল। এর পথ সংক্ষিপ্ত কিন্তু খাড়া। সবুজ জঙ্গল আর নীল জলরাশির বিপরীত দৃশ্য একে অবিস্মরণীয় করে তোলে ট্রেকারদের মধ্যে।

পাই
প্রকৃতির মাঝে আরাম ও অ্যাডভেঞ্চার করতে চাইলে যেতে হবে পাই। চিয়াং মাইয়ের উত্তর-পশ্চিমে একটি পাহাড়ি উপত্যকায় অবস্থিত পাই। জায়গাটি তার শান্ত ও বোহেমিয়ান পরিবেশের জন্য পর্যটকদের কাছে খুবই প্রিয়। এই এলাকার আশপাশের পথগুলো, যেমন পাই ক্যানিয়ন ও হট স্প্রিংয়ের দিকে যাওয়ার পথ, মাঝারি উচ্চতার যা টেকনিক্যাল ট্রেইলের জন্য উপযুক্ত। আর পাই থেকে মায়ে হং সনের দিকে যাওয়া ট্রেইল আরও চ্যালেঞ্জিং। সেখানে আছে বুনো জঙ্গল, পাহাড় ও দুর্দান্ত দৃশ্যপট।
মায়ে হং সন লুপ
ভ্রমণপিপাসুদের জন্য থাইল্যান্ডের একটি জনপ্রিয় ট্রেইল মায়ে হং সন লুপ। সাহসী ও সহনশীলদের জন্য এটি একটি মাল্টি-ডে অ্যাডভেঞ্চারে রূপ নিতে পারে। ৬০০ কিলোমিটারেরও বেশি এই লুপটি উত্তর থাইল্যান্ডের পাহাড়ি পথে নিয়ে যাবে। এ যাত্রাপথ পাড়ি দিতে হয় দৌড় ও হাঁটা মিলিয়ে। এ পথের আশপাশে আছে ঐতিহ্যবাহী গ্রাম, ঘন বন এবং দুর্গম পাহাড়ি এলাকা। এটি গ্রামীণ ও বুনো থাইল্যান্ড আবহে সম্পূর্ণ ডুবে যাওয়ার অভিজ্ঞতা দেয়।
খাও সক
প্রাচীন জঙ্গল ও পান্না সবুজ হ্রদের মাঝে খাও সক এলাকা। থাইল্যান্ডের দক্ষিণে অবস্থিত খাও সক ন্যাশনাল পার্ক অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য স্বর্গের মতো জায়গা। সেখানকার ট্রেইলগুলো চলে গেছে একটি প্রাচীন বনের মধ্যে দিয়ে। সেখানে আছে আকাশ ছোঁয়া কার্স্ট পাথরের পাহাড় আর ঘন সবুজ বন। যাত্রাপথে প্রায়ই কাদামাটির রাস্তা ধরে চলতে হবে। তবে এর সৌন্দর্য এককথায় অতুলনীয়।
- থাইল্যান্ডে ট্রেইল পরিকল্পনার আগে যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে,
- আবহাওয়ার দিকে খেয়াল রাখুন।
- কাদাযুক্ত ও পিচ্ছিল পথে চলার উপযুক্ত জুতা সঙ্গে রাখুন।
- পানীয়ের ব্যবস্থা, মশা নিরোধক ও সানস্ক্রিন সঙ্গে রাখুন।
- গাইডের সাহায্যে নির্ধারিত পথ ধরে চলুন।